জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৯.৯৫ শতাংশ
মো. আখতারুজ্জামান : [১] চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৯৫ শতাংশ, যা আগের মাস ডিসেম্বর থেকে ০.১৮ বেসিস পয়েন্ট কম। ঋণের সুদহারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাবে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
[২] বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ, যা তার আগের ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
[৩] ২০২৪-এর জানুয়ারী শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৫.৬৭ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৩-এর জানুয়ারিতে ছিল ১৪.২৬ লাখ কোটি টাকা।
[৪] কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারী জুন সময়ের জন্য ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১০ শতাংশ। জানুয়ারীতে এ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
[৫] ব্যাংকারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গত দুইবারের মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। সে কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার প্রতি মাসেই বাড়াছে। এছাড়া পলিসি রেটও একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে ব্যাংকের কস্ট অভ ফান্ড বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে জানান তারা।
[৬] ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের গত এক বছর ধরে তারল্য সংকট রয়েছে। এসব ব্যাংক নিজেরা তারল্য সংকটে থাকায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে। যার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।
[৭] কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৬২ শতাংশ। এরপর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। অক্টোবরে কিছুটা বেড়ে ১০.০৯ শতাংশ হলেও ফের নভেম্বরে কমেছে।
[৮] কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দুটি মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ সরবরাহ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমিয়েছে। এছাড়া বাজারে এর প্রভাব বাড়াতে রেপো রেটও—যে সুদহারে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক—কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।
[৯] এ কারণে ব্যাংকগুলোর কস্ট অভ ফান্ডও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকবার রেপো রেট বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে রেপো রেট ছিল ৬ শতাংশ, যা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে ৮ শতাংশ।
[১০] কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নিম্নমুখী করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা প্রথমার্ধে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়াও ব্রড মানি সাপ্লাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯.৭ শতাংশ করা হয়েছে।
[১১] কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের আমদানির পরিমাণ অনেক যাওয়া।
[১২] সাধারণ ব্যবসায়ীদের আমদানির বিপরীতে ব্যাংকগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক লোন থাকে, এসব ঋণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমছে।
[১৩] বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ডলার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেওয়ায় গত বছর আমদানি কমেছে ২১ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে বিনিয়োগে মন্দা দেখা দিয়েছে, যা শেষপর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে ফেলেছে।
[১৪] বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ দেশের মোট আমদানি ২৪.৩২ শতাংশ কমে ৬৫.৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছর ৮৬.৪০ বিলিয়ন ডলার ছিল।
[১৫] চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেয়ের মুদ্রানীতি ঘোষাণার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, মূল্যস্ফীতিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
[১৬] কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মূলধনী পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করছে কম। তিনি জানান, এখন বেসরকারি খাতে বেশির ভাগ ঋণ যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে।
[১৭] ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকবার পলিসি রেট বাড়ানোতে প্রতি মাসেই গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার বাড়ছে।