বিশ্বে পুরুষদের ১ ডলার বেতনের বিপরীতে নারীরা পান ৭৭ সেন্ট কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার ২০ শতাংশ বৈশ্বিক জিডিপি বাড়াতে পারে : বিশ্বব্যাংক
সোহেল রহমান : [১] কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য বৈশ্বিক লিঙ্গ ব্যবধান ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। কোনো দেশই নারীদের জন্য সমান সুযোগ দেয় না-এমন কী ধনী অর্থনীতিও নয়। সহিংসতা ও শিশু যত্নের সাথে জড়িত আইনগত পার্থক্যগুলিকে বিবেচনায় নেয়া হলে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশেরও কম অধিকার ভোগ করে। বৈষম্যমূলক আইন ও কর্মকাণ্ড নারী-পুরুষ সম-অধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে বা ব্যবসা শুরুর অন্তরায়। এ ব্যবধান দূর করতে পারলে বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে।
[২] সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২৪ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো ১৯০টি দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের ওপর শিশুর যত্ন এবং নিরাপত্তা নীতির প্রভাব বিবেচনা করা হয়েছে। [৩] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্গ সমতা অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতাকে জ্বালানি দেয়, দারিদ্র্য হ্রাস করে এবং সামাজিক সংহতি বাড়ায়। কিন্তু আধুনিক যুগে এসেও বিশ্বের কোনো দেশেই কর্মজীবী নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত হয়নি। কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার গড় মাত্র ৬৪ শতাংশ। আগে এই হার ৭৭ শতাংশ বলে মনে করা হতো।
[৪] প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো নারী অধিকার সম্পর্কিত আইন এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত নীতিমালার মধ্যে ব্যবধানও মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন ছিল, গড়ে এর ৪০ শতাংশও নেয়নি দেশগুলো। [৫] প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৯৫টি দেশ নারী-পুরুষ সমান বেতনের আইন প্রণয়ন করলেও সেটির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে মাত্র ৩৫টি দেশ। বিশ্বব্যাপী পুরুষদের এক মার্কিন ডলার বেতনের বিপরীতে বর্তমানে নারীরা পাচ্ছেন মাত্র ৭৭ সেন্ট।
[৬] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অর্ধেকেরও কম দেশে অল্প বয়সী শিশুদের পিতা-মাতার জন্য আর্থিক সহায়তা বা ট্যাক্স ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশে রয়েছে শিশুযত্নের নির্ধারিত মানদণ্ড, যা তাদের পিতা-মাতাকে সন্তানদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারে।
[৭] এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে, শিশুর দেখভাল করার জন্য কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকলে ওই সময়ের জন্য নারীরা কোনো পেনশন সুবিধা পান না। এ ধরনের নিয়ম রয়েছে অন্তত ৮১টি দেশে।
[৮] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৫১টি দেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইন রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত স্থানে বা গণপরিবহনে দুর্ব্যবহার আটকানোর মতো আইন রয়েছে মাত্র ৩৯টি দেশে। অর্থাৎ এসব দেশের নারীরা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে সুরক্ষিত নন।