বাজেট প্রণয়নে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেয়া হবে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : [১] আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
[২] রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
[৩] অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব অপরিহার্য। বর্তমান সরকার দেশের বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা বিশ্বাস করি বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং দেশের অর্থনীতিতেও বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বাড়ছে। সে বিবেচনায় আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে।
[৪] তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসাওে বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়কর, মূসক ও শুল্ক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামোর সক্ষমতা বাড়ানো, অটোমেশন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ঋণের সুদ হার যৌক্তিক করা, অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
[৫] অর্থমন্ত্রী বলেন, এ পদক্ষেপগুলো আরও কীভাবে সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশাকরি পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। আমরা চাই বেসরকারি খাত আরও বেশি বৃদ্ধি পাক এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা পালন করুক। আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সধানে কাজ করে যাচ্ছি।
[৬] তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও কিছু কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাজেটে সে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। এছাড়া বাজেটে রাজস্ব আয় বাড়ানো, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ অন্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। আমরা আশাকরি এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
[৭] প্রসঙ্গক্রমে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে এরই মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ বা তার বেশি মূসক পরিশোধে ই-পেমেন্ট, ই-চালান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাইকারি পণ্য ও সেবা পর্যায়ে ইএফডিএমএস’র মাধ্যমে মূসক জাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত হাজার এবং ক্রমান্বয়ে ৩ লাখ ইএফডিএমএস মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, সহজ ও দ্রততম সময়ে সেবা প্রদান, কার্যকর অবকাঠামগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নের কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে।
[৮] তিনি বলেন, বৈশিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমাদের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এবং বাণিজ্য সহযোগী অন্য দেশগুলোতে সামনের দিনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকবে। এটা একটা ভালো সংবাদ আমাদের জন্য। বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২৪ সালে তা ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
[৯] তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির গতিধারা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন ভালো আছে। পূর্বাভাসটা ভালো আছে। আমাদের কাজে এটা সাহায্য করবে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যা বর্তমানে ৮২ দশমিক ৫ ডলারে নেমে এসেছে। কাজেই জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটা আমাদের কাজের জন্য সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করছি।
[১০] অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি মাসখানেক হলো। শুরুতেই আমরা বেশ বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে। যদিও ২০২৩ পর্যন্ত চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১ দশমিক ৯৩ ডলার ঘাটতি রয়েছে।
[১১] তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রয়েছে এবং সর্বশেষ ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
[১২] তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমাদের সরকারের সাফল্যসমূহ হলো- অভ্যন্তরীণ ও বহিঃখাতে নানা শক্তির অভিঘাত সত্ত্বেও ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ৬ দশমিক ৬০ শতাংশের ওপরে রাখা এবং বাজেট ঘাটতি জিডিপি’র ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। সরকারি বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, সরকারি ব্যয় ও বৈদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করা। বার্ষিক কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি করা, মাথাপিছু আয় বাড়ানো ও দারিদ্র্য বিমোচন।