কয়লার দাম বেশি তাই কয়লা উত্তোলনের আবারো আশঙ্কা করছি
কল্লোল মোস্তফা
রামপাল, মাতারবাড়ি সহ নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার বাড়তি দামের যুক্তি দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংস করে হলেও কয়লা উত্তোলণের চাপ তৈরী করা হবে বলে আশংকা রয়েছে।
রামপাল, মাতারবাড়িসহ যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে সেগুলোর অর্থনৈতিক সমীক্ষার সময় কয়লার দাম যা ধরা হয়েছিলো, আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম তা থেকে ২/৩ গুণেরও বেশি হয়ে গেছে, যা সহসাই কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণ স্বরুপ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথাই ধরা যাক। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক সমীক্ষার সময় কয়লার দাম ১০৫ থেকে ১৬৫ ডলার করে ধরা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো কয়লার আমদানি বাবদ খরচ (কয়লার দাম+ পরিবহন খরচ) যদি টন প্রতি ১০৫ ডলার হয় তাহলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়বে ৬ টাকা ৫৫ পয়সা আর যদি কয়লার খরচ টন প্রতি ১৬৫ ডলার হয় তাহলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পড়বে ৮ টাকা ৭৯ পয়সা। এখন রামপাল বা মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার সময় যদি আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেশি থাকে, যদি কয়লা আমদানির খরচ ৪০০ ডলার হয় তাহলে সেই কয়লা আমদানি করে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের খরচ পড়বে ১৭ টাকা! এলএনজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এলএনজি আমদানি যেমন কঠিন হয়ে গেছে, একই ভাবে এত বেশি দামে কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও তা দেশের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক চাপ তৈরী করবে।
আর তখনই মাঠে নামবে কয়লা লবি। এর আগে বিদ্যুৎ সংকটকে কাজে লাগিয়ে যেমন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাস্টিফাই করা হয়েছে, তেমনি এবারের জ্বালানি সংকটকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ ধবংস করে কয়লা উত্তোলণকে যুক্তিযুক্ত করবার চেষ্টা করা হবে। এর নাম হলো বিপর্যয়ের পুজিবাদ অর্থাৎ যে কোন সংকট বা বিপর্যয়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা। তো সংকটের সুযোগ নিয়ে তারা বলতে থাকবে দেশের কয়লা মাটির নীচে রেখে কেন বিদেশ থেকে এত দাম দিয়ে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে? অবশ্য এখনই তার কিছু কিছু শুরু হয়ে গেছে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর এই চাপ আরো বাড়বে। তখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী করা হবে যেন মনে হবে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলাটাই কঠিন।
একই সাথে আরেকটা জিনিস ঘটতে পারে বলে আশংকা রয়েছে, দেশের ভেতরে কয়লা তুলতে সুবিধা করতে না পারলে ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানির ধান্দা করা হবে যা পরিবেশের জন্য আরো বিপর্যয়কর হবে। যুক্তি দেয়া হতে পারে যে, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লার যেহেতু দাম বেশি এবং পরিবহন খরচ বেশি, তাই নিম্নমানের হলেও প্রতিবেশি দেশ থেকে সস্তায় কয়লা আনতে হবে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে!
দেশের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার সময় থেকেই বলা হচ্ছে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য যথাযথ না, টেকসই না। বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত হলো স্থলভাগের ও সাগরের গ্যাস উত্তোলন এবং নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উত্তোলণে জোর দেয়া। কিন্তু সময় মতো এই কথাগুলো গুরুত্ব না দিয়ে রেন্টাল-কুইকরেন্টাল, কয়লা আর এলএনজির পেছনে অর্থ ও সময় ব্যয় করায় আজকে এমন এক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যে তার খেসারত সবাইকে দিতে হচ্ছে। লেখক: নির্বাহী সম্পাদক সর্বজন কথা