রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত, বাড়ছে বাজার তদারকি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
সোহেল রহমান : [১] রমজান উপলক্ষে বাজারে এ মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই এবং সারাদেশে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
[২] তিনি বলেন, এছাড়া রোববার থেকে বাজার তদারকি আরও বাড়ানো হচ্ছে, আমরা বাজার পরিদর্শন শুরু করছি। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদেরও একটু সততার সঙ্গে ব্যবসাটা করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিটাকে প্রাধান্য দিয়ে যাতে আমরা ব্যবসাটা করি।
[৩] রোববার সচিবালয়ে কৃষিপণ্য সরবরাহে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রোডিনটর্গ’র সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
[৪] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরপরই যারা রোজার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ও উৎপাদন করেন তাদের সঙ্গে বসেছি। আমদানি ও উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই- সরবরাহ নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই যেন সরবরাহে ঘাটতি না হয়। বাজারে রমজান উপলক্ষে এ মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। বাজার সরবরাহ চেইনে কেউ যদি ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা পদক্ষেপগুলো নিয়েছি। পরিস্থিতির একেবারে যে উন্নতি হয়নি তা নয়। টিসিবি’র মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দেয়া হয়, এটা সম্পূর্ণ শুরু হলে এতেও বাজারে একটা চাপ কমে যাবে।
[৫] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তীতে টিসিবি’র মাধ্যমে ফেয়ার প্রাইসে মাল্টিপল প্রোডাক্ট সরবরাহ করবো, যদি আমাদের এই রকম সোর্স থাকে। এ লক্ষ্যে টিসিবিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
[৬] সুপারশপগুলোতে নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন কাঁচাবাজারে গেলাম, তখন দেখলাম প্রত্যেকটি জিনিসের দাম নির্ধারিত দামের চেয়ে দুই-তিন টাকা বেশি। একেবারে খুচরা পর্যায়ে কাঁচাবাজারগুলো অস্থায়ীভাবে থাকে, ওইগুলো আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো Ñসেটা এখন বের করতে হবে।
[৭] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গত দেড় মাসে চালের বাজারে একটা অস্থিরতা ছিল। সেটা এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। চালের দাম নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তেলের দাম আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি।? ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য তাদের সম্মতি আমরা পেয়েছি। দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজও বাংলাদেশে ঢুকবে।
[৮] প্রতিমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে শুনলাম লেবুর দাম বেড়ে গেছে। শসার দাম, পেঁয়াজের দাম। এটি কিন্তু সারাদেশের তুলনায় ঢাকার কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই বলবো। এটি কিন্তু গুটিকয়েক জায়গায়। সারাদেশের পরিস্থিতি কিন্তু এটা না। অনেক সময় হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যায়। দেখা যাবে যে, আজ বা কাল সবাই বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়বো, ১০/২০ দিনের সাপ্লাই একদিনে কিনে ফেলবো। ডিমান্ড বেড়ে গেলে হয়তো ওই অনুযায়ী সাপ্লাইটা আসে না। এজন্যও দাম বাড়তে পারে।
[৯] তিনি বলেন, অন্যদিকে আজ (রোববার) সকালে শুনলাম, একজন বিক্রেতা বলতেছে যে, বছরে একটাবার রোজা আসে লেবু দিয়ে একটু ই করতে হয়, কৃষকরা একটু পয়সা পায়, আমরাও দুইটা পয়সা পাই। ব্যাপার কিন্তু এটাই। এখানে কিন্তু কোনো বড় গ্রুপ কাজ করতেছে না। একটা ডালা নিয়ে তিনি ব্যবসা করতেছেন, সে চিন্তা করতেছে দুই টাকা বেশিতে পাইলে সে দুই টাকা বেশি লাভ করবে। ভেরি ইনোসেন্টলি সে এ কথাটা বলেছে।
[১০] প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত-এ দেখলাম যে, রমজান উপলক্ষে ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম নিয়ে একটা রাষ্ট্রীয় সার্কুলার দেয়া হয়েছে, এ পণ্যগুলোর দাম কেউ এ মাসে (রমজান) বাড়াতে পারবে না। আমরা এবার হয়তো এটা করতে পারি নাই। আমাদের সাপ্লাই চেইন ইম্প্রুভ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ ইম্প্রুভ করে আগামীতে কেবিনেটের অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটা কমপ্লিট লিস্ট তৈরি করবো। চেষ্টা করবো কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে।
[১১] রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও গম, ভুট্টা, ডালের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। এগুলো আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গমের উৎস হলো রাশিয়া। আজ যে প্রোডাক্টগুলো তারা সাইন করলো- রাশিয়ান ফেডারেশন থেকে তারা যদি সাপোর্ট দিতে পারে তাহলে আমাদের ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির একটা বড় বাফার স্টক আমরা তৈরি করতে পারবো।
[১২] তিনি বলেন, শুধু রাশিয়া থেকে নয়, কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনতে আমরা ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।