ইফতারে সাধারণ মানুষ খরচে হিমশিম খাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় রোজাদারদের খরচ বাড়ছে
মাসুদ মিয়া: [১] আজ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। প্রতি বছরই রমজানকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে নিত্যপণ্যেও দাম কমার হিড়িক থাকলেও দেশে বাড়ার হিড়িক রয়েছে।
[২] ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছরই রোজা এলেই জিনিসের দাম বাড়ে। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষগুলো কিছুদিন লোক দেখানো অভিযান চালাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে এবং পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়ার পর ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমবে। এটাই নিয়ম হয়েগেছে। রোজার কয়েক মাস আগেই পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে রোজায় চিনি, খেজুর, সয়াবিন তেল, ছোলাসহ ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদের ডালের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর এসব পণ্যের প্রায় সবগুলোর দামই চড়া। এর মধ্যে চিনি ও তেলের দাম এক বছরের বেশি সময় ধরে বাড়তি। তার সঙ্গে রোজাকে সামনে রেখে এবার খেজুর, ছোলা ও ডালের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, বেগুন, শসা ও লেবুর দামও চড়া। বিদেশি ফলের দাম নাগালের মধ্যে নেই। তাতে ইফতার আয়োজনে সাধারণ মানুষকে এবার খরচ সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হবে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। [৩] টিসিবির হিসাবে, ২০২১ সালে রোজার আগে বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তাতে দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে টিসিবির দামের চেয়ে বাজারে চিনি ও ছোলার দাম আরও বেশি। বাজারভেদে এ দুটি পণ্যের দাম টিসিবির দেওয়া দামের চেয়ে ৫ টাকার বেশি। এ বিষয়ে রাজধানীর মতিঝিল বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, রোজার আগে ছোলা ও বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম বাড়তি। বেসনের দামও বেড়েছে। বর্তমানে কেজিপ্রতি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
[৪] টিসিবির হিসাবে, গত দুই বছরে বাজারে অ্যাংকর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ২০২২ সালের রমজানের আগে অ্যাংকর ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ২০২২ সালে এ দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
[৫] নিয়ন্ত্রণহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার। চাহিদা বিবেচনায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। রোজাকে ঘিরে লেবু, বেগুন ও শসার দাম নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে আরো কঠোর আইন করতে হবে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। ইফতারে ব্যবহার হয় এমন অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে গত দু’দিনে। রমজানে বেশি ব্যবহার হয় এমন বেশির ভাগ কাঁচা পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।
[৬] খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৬০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ১৫ টাকা। আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।
[৭] রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি বেগুন সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। কয়েকদিন আগেও পণ্যটি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাওরান বাজার, মিরপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৮০ টাকা কেজিতে বেগুন বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
রমজানে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে, তবে সেগুলোর আমদানি সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার মতো কারণ আছে। তবে দেশের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা মেটে লেবুর। আমদানির প্রশ্ন না থাকায় লেবুর সঙ্গে ডলারের দর বাড়ার সম্পর্ক নেই। তবু অস্বাভাবিক লেবুর দাম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে যে লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে গত দু’দিন ধরে তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
[৮] তারা বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রোজার আগে পণ্যগুলোর দাম বাড়ার কারণ জানেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, রোজা আসলে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন তিন ধরনের শসা পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি ১১০ থেকে ১২০ দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েকদিন আগেও দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের শসার কেজি কেনা গেছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা, বেগুন ও শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে।
[৯] অন্যদিকে, রমজান এলেও কমছে না পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম। গতবছর রোজার আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সেই হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজে বেশি খরচ হবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
[১০] খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও রসুন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত রমজান থেকে প্রায় প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেশি। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির এখনো গত বছরের দামকে অতিক্রম করেনি। যদিও গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুই দিন আগে কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গত বছর এ সময় দর ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
[১১] তবে গত বছরের এ সময়ের দরকে ছাড়িয়েছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। গত বছর রোজার আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।
[১২] এদিকে গত বছরও রোজার দুদিন আগেই শতক ছুঁয়েছিল বেগুন। তবে এবার দর শতকে না গেলেও কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।