যদিও ডিএনএতে নাম বা ধর্ম লেখা থাকে না
পারভেজ আলম
ডিএনএ টেস্ট করার মাধ্যমে মৃত মেয়েটার নাম পরিচয় নিশ্চিত করা হলো। যদিও ডিএনএতে নাম বা ধর্ম পরিচয় লেখা থাকে না, কিন্তু আজকে আমাদের এমন দিন দেখতে হচ্ছে। এটা হলো প্রযুক্তিগত প্রগতির ফলাফল। সোস্যাল মিডিয়ায় তৈরি হওয়া সমাজের বাস্তবতা। একটা মৃত মেয়ের লাশ নিয়ে আমাদের সমাজ যা করলো, তা আমাদের সময়কার বায়োপলিটিকাল রেসিজম ও সেক্সিজমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
লালন সেই কবে গেয়েছেনঃ কী জাত হবে যাবার কালে? মিশেল ফুকো যখন বায়পলিটিক্সের তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, তখন দাবি করেছিলেন যে আমাদের সময়ে মানুষের পুরা জীবনটাই চলে গেছে বায়োপাওয়ারের কবজায়। আজকের দিনে কেবলমাত্র মৃত্যু হলো সেই পর্দা, যা ভেদ করে গেলে মানুষ বায়োপাওয়ারের কব্জা থেকে মুক্তি পাইতে পারে। কিন্তু ফুকো বিগত হয়েছেন অনেকদিন হয়। এই সোস্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা এমন এক দুনিয়ায় এসে পৌছেছি, যখন এমনকি মৃত মানুষও বায়পলিটিকাল রেসিজম ও সেক্সিজমকে এড়াইতে পারে না। যিনি মানব সমাজকে অতিক্রম করে গায়েবের জগতে চলে গেছেন, তাকেও আমাদের সমাজ বায়োপলিটিকাল জাজমেন্টের শিকার বানাতে উঠে পড়ে লাগে। এবং এদের মধ্যে বিন্দুমাত্র লাজলজ্জা দেখা যায় না। একদল নিজেদেরকে বিরাট ধার্মিক ও আরেকদল নিজেদেরকে বিরাট প্রগতিশীল বলে দাবি করে। অথচ রেসিজম, ক্লাসিজম, ও সেক্সিজমের মতো বায়োপলিটিকাল তৎপরতায় এরা কেউ কারো চাইতে পিছিয়ে নাই।
এই মেয়েটার জীবন ও মৃত্যু পরবর্তি পরিস্থিতি নিয়া চিন্তা করলে দুঃখ ছাড়া অন্য কোন অনুভূতি হয় না। যারা মেয়েটার লাশ নিয়ে রাজনীতি করেছেন, নানান রকম জাজমেন্ট দিয়েছেন, তাদের হৃদয়টা কেমন সেই ব্যাপারে আমার ধারণা নাই। এরা কি সবাই পাত্থর? এদের মনে কি দয়া মায়ার মতো অনুভূতিগুলা পুরাপুরি শূন্য হয়ে গেছে? কোন জাহান্নামের আগুনে এদের নফস সদাই পুড়তে আছে জানি না। কিন্তু এরা যে জগতের প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও দেহর (মরার পরেও) উপর নিজেদের সার্বভৌম বিচার কায়েম করতে চায়, তার মাধ্যমেতো এরা দুনিয়াটাকেই এদের অন্তরের জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে ফেলতে চায়।
এরা ভাবে যে প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের উপর সার্ভেইলেন্স কায়েমের অধিকার এদের আছে। এইক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক আর সোসাল মিডিয়ার মধ্যে ফারাক নাই। জগতের কোন কিছুই এদের বিচার ও রায়ের ঊর্ধে নাই। এরা দুই গ্রুপই নিজেদেরকে খোদা মনে করে। অথবা অন্তত কিরামান কাতেবিন, বা মুনকার নাকির। এবং এদের মধ্যে সামান্য ভয় বা লজ্জা নাই। সামান্য অনুতাপ নাই। এদের প্রত্যেকের নফস একেকজন সার্বভৌম ফেরাউন বা নমরুদ। বেসিকালি, বাঙলার সমাজে এদেরকেই অতীতে শয়তানের মানবিক উদাহরণ বলে মনে করা হইতো। এই যে রমজান মাসেও এদেরকে নানান রকম রেসিজম, ক্লাসিজম, সেক্সিজমে জড়াইতে দেখা যাচ্ছে, এতেই প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের সমাজ ইটসেলফ একটা জাহান্নাম, যেখানে আল্লাহ একদল শয়তানকে কেবল রমজান মাসের জন্যে না, বরং পার্মানেন্টলিই দাখিল করে দিয়েছেন।
আপনি আমাদের একটা তথাকথিত লিবারালরে গিয়া বলেন যে ভাই ধার্মিক লোকজনের প্রতি রেসিস্ট, ক্লাসিস্ট মনোভাবে রাইখেন না, তারা আপনাকে পাত্তাই দিবে না। আপনি আমাদের একজন সেন্ট্রিস্ট-লিবার্টারিয়ান সেলিব্রেটিকে গিয়া যদি বলেন যে ভাই মানুষকে ক্লাসিস্ট গালি দিয়েন না, সে আপনার কথার দুই পয়সাও দাম দিবে না। এদের নফস ইবলিশের চাইতে কোন অংশে কম প্রাউড নয়। নিজেদের ইগোর ঝলকানি দেখাবার জন্যে যেকোন সুপরামর্শকে এরা পায়ে দলবে। এবং যেকোন জঘন্য কাজকর্মকে সমাজে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলবে।
এই রমজান মাসে এই রেসিস্ট, ক্লাসিস্ট, ও সেক্সিস্ট বাংলাদেশী সমাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখাটাও একটা বড় ইবাদত হবে বলে মনে করি। বন্ধুরা, আপনাদের যাদের বিবেক বুদ্ধি এখনো কিছুটা অবশিষ্ট আছে, এই নরক থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। ফেসবুকে ঢুকলেও এই নরকের বাসিন্দাদের সাথে তর্ক বিতর্ক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। কেননা, এদের সাথে তর্ক করার মানে হচ্ছে ওদের নরকের আগুনে প্রবেশ করা। এই জালেমের দলের সাথে অনলাইনে তর্ক না করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্প্রীতি বাড়িয়ে তুলুন। নিজেদের কাজে বেশি সময় দেন। আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশী সমাজ গঠন করতে হবে। আর জালেমদের শাস্তি জালেমরা সময় মতো পেয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। লেখক: প্রবাসী