কোনোভাবেই শেয়ারবাজারে পতন থামছে না ডিএসইতে ৩০৮টি কোম্পানির দর কমেছে
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার রমজানের মাসের প্রথম কার্যদিবস মঙ্গলবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা চার কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২০ কার্যদিবসের মধ্যে ১৭ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের। [২] রমজানের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার ৬ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের। এতে সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে ৩০৮ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে।
[৩] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
[৪] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনোভাবেই শেয়ারবাজারে পতন থামছে না। পতনের ধাক্কায় বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা কেউ বাজারের উপর্যুপরি পতনের কোনো কারণ বলতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, টানা দরপতনের কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার মন্দার মধ্যে রয়েছে। তবে মাঝে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখে গেলেও সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী লোকসানের মধ্যে রয়েছেন।
[৫] গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট বাড়ে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতা শেষ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকেনি। [৬] প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একেরপর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। গড়পড়তা সব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় একদিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়েছে, অন্যদিকে সবকটি সূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪৫টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
[৭] ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৫১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৯০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এসএস স্টিলের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশের ৩১ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিকস। [৮] এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, গোল্ডেন সন, লাভেলো আইসক্রিম, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বেস্ট হোল্ডিং, ফরচুন সুজ এবং আফতাব অটোমোবাইল।
[৯] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১২৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেয়া ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৫টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।