টানা দরপতনের কারনে নি:স্ব হচ্ছে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তিন বছরের মধ্যে ডিএসইতে সর্বোনিম্ন সূচক
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতনের কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসও পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা ছয় কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দর হলো। [২] ডিএসইর সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বোনিম্ন অবস্থান করছে। গতকাল ডিএসইএক্স মূল্যসূচকটি ৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে নেমেছে। যা গত ২০২১ সালের ২৬ মে’র মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৫ মে গতকাল থেকে নিচে সূচকটি ছিল। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর মূল্যসূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। যার কারণে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।
[৩] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারে খারাপ কোম্পানির শেয়ারেরই দাপট চলছে। তার বিপরীতে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। এ কারণে যখনই ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরপতন ঘটছে, সূচকটি তখন নেতিবাচক ধারায় থাকছে। অন্যদিকে কারসাজি করে যেসব শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে, একটি পর্যায়ে গিয়ে সেসব শেয়ারেরও দরপতন হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাজার নেতিবাচক ধারায় চলে যাচ্ছে।
[৪] এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কমেছে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্টও কমেছে সে কারনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে।
[৫] এবিষয়ে বিনিয়োগকারী জামান বলেন, টানা দরপতনে কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। ফলে অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রির করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম প্রতিদিনই কমছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। গুঞ্জন শুনছিলাম সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নামবে না। এখন তো সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এখন সূচকের পতন কোথায় গিয়ে গিয়ে ঠেকে সেটাই দেখার বিষয়। সূচকের এই পতনের বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টকে আমরা মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট ধরে নেয়। কিন্তু সেই সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা পেনিক হয়ে পড়েছে। তারা বিক্রি চাপ বাড়ানোর কারণেই এই দরপতন হচ্ছে।
[৬] এবিষয়ে ডিএসইর আরেক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। কিছু গুজব বা গুঞ্জনের কারণে এই দরপতন হতে পারে। তবে আমি মনে করি এই দরপতনের জন্য মূলত বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ মূল দায়ি। বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ কমালে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
[৭] গতকাল ডিএসইএক্স মূল্যসূচকটি ৬ পয়েন্ট কমে ৫৯৬৮ পয়েন্টে নেমেছে। যা বিগত ২০২১ সালের ২৬ মে’র মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৫ মে আজকের থেকে নিচে সূচকটি ছিল। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৫১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বা ৬ শতাংশ।
[৮] এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৬৫ টি বা ৪১.৮৮ শতাংশের। আর দর কমেছে ১৭১ টি বা ৪৩.৪০ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৫৮ টি বা ১৪.৭২ শতাংশের। অপরদিকে সিএসইতে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১২ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৮৫ টির, কমেছে ৮৯ টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৮ টির। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫ পয়েন্ট কমে দাঁডিয়েছে ১৭০৯০ পয়েন্টে।