বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত ভবিষ্যতে মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে কিডিনি রোগী : বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য
শাহীন খন্দকার : [১] বাংলাদেশে কিডনী রোগীর সংখ্যা দুই দশমিক ৫ কোটি (প্রায়) রয়েছে। এদের মধ্যে আকস্মিক কিডনী রোগীর সংখ্যা ২৫-৩০ হাজার (প্রতিবছর) দীর্ঘ স্থায়ী কিডনী রোগীর সংখ্যা ৩৫-৪০ হাজার প্রতি বছর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
[২] তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসক রয়েছে ৩০০ জন। বর্তমান বিশ্বে কিডনী রোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচেছ। বাংলাদেশে ১০ বৎসর পূর্বে কিডনী রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি আর বর্তমানে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি। বৃদ্ধির হার এতই ব্যাপক যে অদুর ভবিষ্যতে এটা মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে।
[৩] বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রাসহ শহীদ ডা. মিল্টন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করেন কিডনি বিভাগ। সুস্থ কিডনি সবার জন্য/ বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যায়সঙ্গত সেবার সমান সুযোগ আর নিরাপদ ও সর্বোত্তম ঔষধের অনুশীলন প্রতিপাদ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব কিডনি দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে।
[৪] উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কিডনী রোগের বিস্তৃতি ও বাংলাদেশ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ২টি কিডনীর প্রতিটিতে প্রায় ১০-১২ লক্ষ ছাকনি রয়েছে। মানুষ জন্ম গ্রহন করার ৬ সপ্তাহের মধ্যেই কিডনীর ছাকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরী হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনী পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে এবং প্রতি ২৪ ঘন্টায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে।
[৫] ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই পরিশোধিত রক্তের মধ্যে ১-৩ লিটার শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়া হয়। সুতরাং কোন কারণবশতঃ যদি এ ধরনের ফিল্টার বাঁধাপ্রাপ্ত হয় তখন আকষ্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগ হতে পারে। কিডনীর কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন নামক জৈব পদার্থ পরিমাপ করা যায় যার মাধ্যমে কিডনী কতটুকু কাজ করছে তা বোঝা যায়। একজন সুস্থ পুরুষ লোকের শরীরে ক্রিয়েটিনিন সাধারণভাবে ১.১ মিঃগ্রাঃ% এবং মহিলার ১.০ মিঃগ্রাঃ ১ শতাংশ হিসাবে স্বাভাবিক ধরা হয়। যদি এই ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক এর উপরে ৩ মাস বা ততোধিক স্থায়ী থাকে তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগী হিসাবে সনাক্ত করা হয়।
[৬] তিনি বলেন, রক্তে ক্রিয়েটিনিন ছাড়াও প্রস্রাবে নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক প্রোটিন বা এলবুমিন থাকলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগ আছে বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে এক সমীক্ষায় (৩ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর) দেখা গেছে যে, প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ শতাংশ এবং আইসল্যান্ডে ১০ শতাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগে আক্রান্ত।
[৭] আকষ্মিক কিডনী রোগ. হঠাৎ করে কোন কারণে যখন কিডনী তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তাকে আকস্মিক কিডনী রোগ বলে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিডনীকে পুনরায় পূর্বের কর্মক্ষম অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। আকস্মিক কিডনী রোগের কারণ সমূহঃ হলো ডায়ারিয়া, রক্তক্ষরণ, কিডনী প্রদাহ, তীব্র সংক্রমণ, আকষ্মিক হৃদরোগ, কিডনীর ক্ষতিকারক কিছু ঔষধ, মুত্রনালীর প্রতিবন্ধকতা।
[৮] লক্ষণ হচ্ছে প্রস্রাব কমে যাবে/বন্ধ হয়ে যাবে, শরীরে পানি আসবে ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে। এ অবস্থায় প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস দেয়া লাগতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি কিডনী রোগ। যখন কিডনীর কার্যকারিতা ৩ মাস বা ততোধিক সময় পর্যন্ত লোপ পেয়ে থাকে তখন তাকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনী রোগ বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি কিডনী রোগের কারণ সমূহঃ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস ও অন্যান্য।
[৯] এছাড়াও বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, প্রথম দিকে ঘন ঘন প্রস্রাব, পরবর্তীতে কমে যাওয়া, ক্রমান্বয়ে দুর্বলতা বৃদ্ধি পাওয়া, রক্ত স্বল্পতা, ও শ্বাস কষ্ট। প্রতিরোধ করতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার ও নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত প্রোটিনযুক্ত খাবার, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ডায়ালাইসিস, কিডনী সংযোজন ইত্যাদি।
[১০] অনুষ্ঠানে কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তৌহিদ রমা. সাইফুল ইসলাম দিপু, কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএইচএম হামিদ আহমেদ, অধ্যাপক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক প্রমুখ।