রোজায় নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলছে না মুরগির, বেগুন লেবুর দাম সামান্য কমলেও বেড়েছে চাল ও আলুর
মাসুদ মিয়া: [১] পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। রমজান মাসটি পুণ্যের হলেও বেশি মুনাফার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। লাভ করতেও মরিয়া তারা। রমজান মাস আসলে একটি রীতিতে পরিণত করেছে এসব ব্যবসায়ীদের কাছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। রোজায় নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলছে না
[২] মুরগির, বেগুন, লেবুর দাম সামান্য কমলেও বেড়েছে চাল ও আলুর দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের খরচ আরও বেড়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ। তার ওপর রমজান মাসকে ঘিরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী গতি এ চাপকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রমজান মাসের বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সাধারণ মানুষ।
[৩] প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। বাজারে কোনো সুখবর নেই। নানান ধরনের ঘোষণা থাকলেও তার নেই বাস্তবায়ন। এরই মধ্যে আবার বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম আলু। যদিও বাজারে আমন ধানের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, তারপরও বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও মিনিকেট চালের দাম গত তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। গকতাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
[৪] বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এর আগে ভোটের পরপর চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এরপর কিছুটা কমে মাস দেড়েক স্থিতিশীল ছিল। এখন আবার মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, তাদের কেনা দাম বেশি। অন্যদিকে মিলারদের দাবি, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে।
[৫] রামপুরা বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির জসিম উদ্দিন বলেন, গুটি স্বর্ণা ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা হয়েছে প্রতি বস্তা। এ চাল আগে খুচরা ৫০ টাকায় বিক্রি করা যেত, এখন ৫১-৫২ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। বস্তা নিলে ৫১ টাকায় দেওয়া যায়, খুচরায় ৫২ টাকার নিচে হয় না।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা। মিনিকেট ২৫ কেজির বস্তা আগে ১৬০০ টাকা ছিল, এখন ১৭০০ টাকা হয়েছে। সে কারণে খুচরা ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা ৬৮ টাকা ছিল। আর ভালো মানের মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি আরও দুই টাকা বেশি।
[৬] একইভাবে পাইজাম চালের দাম ৫১-৫২ থেকে বেড়ে প্রতিকেজি ৫৩-৫৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। হাজীপাড়া এলাকায় কুমিল্লা রাইস এজেন্সির কর্ণধার মহসীন বলেন, হঠাৎ করে কেন চালের দাম বেড়ে গেলো তার কোনো উত্তর দিতে পারছেন না মিলমালিকরা। আমরা ভেবেছিলাম রোজার আগে সরকার চাল আমদানি শুল্ক কমিয়েছে, দাম নিম্নমুখী থাকবে। কিন্তু দাম বেড়ে যাবে সেটা ভাবিনি।
[৭] মুরগির দাম কমলেও তারা স্বস্তিতে নেই। কারণ কম ওজনের মুরগি বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। কিনতে গেলে বড় মুরগি কিনতে হচ্ছে। ফলে প্রয়োজন না থাকার পরও অনেককে বেশি ওজনের মুরগি কিনতে হচ্ছে। ওজন বেশি হলে দামও বেশি আসে। আর কম ওজনের মুরগি পাওয়া গেলেও স্বাভাবিকের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি।
[৮] বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে ২২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, সোনালি ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩৪০ টাকা দরে। সোনালি হাইব্রিড ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ২৯৫ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
[৯] পাইকারি বাজারে দাম কমার কারণে খুচরা বাজারে দাম কমেছে বলে জানান কলতাবাজারের মুরগি বিক্রেতা জাকির। তবে দামের কারণে বিক্রি আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে।
[১০] বিক্রেতাদের ওপর দোষ চাপিয়ে কলতাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাবিব বলেন, রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের সময় মানুষ একটু ভালো খাবারের আয়োজন করে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করছেন।
[১১] তিনি বলেন, পরিবারের চাহিদার অর্ধেকও কিনতে পারছি না। বাজারে মনিটরিং না থাকায় যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে পণ্য বিক্রি করছেন। আমরা ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় হয়ে গেছি।
[১২] বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম ১৩৫- ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
[১৩] ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
[১৪] বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ১০০ টাকা, বেগুন কিছুটা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে , করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, শসা ১০০ টাকা, খিরা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে। আলুর কেজি ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা কেজি, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, পটল ১০০ টাকা ও সজনে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি মুলা ৪০ টাকা, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ব্রোকলি প্রতিটি ৩০ টাকা। পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি কমে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে রোজার প্রথম দিন ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা উঠেছিল, ধনে পাতার কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কলার হালি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা।
৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৪০০-৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৪০০- ৬০০ টাকায়, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ টাকা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।