মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর কোন চেষ্টা সরকারের আছে কি?
ফরিদা আখতার
বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৫৬, তারই একজন হয়ে গেল সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুন। বয়স মাত্র ২৩। এর মতো লজ্জার এবং দুঃখের বিষয় আর হতে পারে না। তিনি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার মৌতলা ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে এক পুত্র সন্তান প্রসব করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে কালিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল এই অবস্থায়, কিন্তু নেয়ার পথেই তার মৃত্যু ঘটে। রাজিয়া জাতীয় ফুটবল দলের একজন তুখোড় খেলোয়াড় ছিলেন, দেশের জন্য তিনি এবং তাঁর দল জয় এনে দিয়েছেন। দেশের সুনাম হয়েছে। তাদের মতো খেলোয়ারদের দেখে অন্য মেয়েরাও আগ্রহী হয়েছে। কিন্তু দেশ তাকে কি দিল? রাজিয়া যে গর্ভবতী ছিল এই কথা কি জাতীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ জানতো না? নাকি কোন খোঁজই তারা নেন না? রাজিয়া গরিব ঘরের ছিল এটাই কি তার প্রতি অবহেলার কারণ? নাকি নারী বলে? ফুটবল কর্তৃপক্ষ পুরুষ খেলোয়ারদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে নারী খেলোয়ারদের এই বিশেষ প্রয়োজনের দিকটি বেমালুম ভুলে গেছেন!!
রাজিয়া অত্যন্ত মেধাবী খেলোয়ার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
রাজিয়ার জন্ম ২০০১ সালের ২৫শে জানুয়ারি। মৃত্যু হোল ২০২৪ সালে। রাজিয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উত্থানের শুরুর দিকের একজন ছিলেন। এএফসি অ-১৪ রিজিওনাল (সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ এশিয়া) চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন তিনি।
রাজিয়া এদেশের একজন সম্পদ ছিলেন। তার মৃত্যু প্রমাণ করে আমাদের দেশে যতোই মেধাবী হোক নারী এবং গরিব হলে তাদেরকে এভাবে অবহেলাতেই মরতে হয়। তারা যখন জয় করে দেশের সম্মান নিয়ে আসেন তখন প্রধানমন্ত্রীরও দেখা মেলে, কিন্তু যখন তার প্রয়োজন হয়, তখন কেউ তার পাশে থাকে না।
সন্তান প্রসবের ঘটনায় রাজিয়ার মৃত্যু কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর কোন চেষ্টা সরকারের আছে কি? লেখক : মানবাধীকার ও উন্নয়ন বিষয়ক নেত্রী