সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ৫ কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার পাঁচগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের। সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। পাঁচ সপ্তাহের এই পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর মূল্যসূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। যার কারণে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।
[৫] এবিষয়ে বিনিয়োগকারী রাজ্জাক বলেন, টানা দরপতনে কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। ফলে অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রির করে দিচ্ছে।
[৬] এবিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। কিছু গুজব বা গুঞ্জনের কারণে এই দরপতন হতে পারে। তবে আমি মনে করি এই দরপতনের জন্য মূলত বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ মূল দায়ি। বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ কমালে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০১টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা বা দশমিক ১৭ শতাংশ, ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমলো ৭২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তার আগের তিন সপ্তাহে কমে ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ, ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ৪০৫ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৪২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সবকটি মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৫১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা ৩১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৩১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোল্ডেন সনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ১১২ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, এস এস স্টিল, সেন্ট্রাল ফার্সামিউটিক্যালস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বেস্ট হোল্ডিং, আফতাট অটোমোবাইলস এবং ফরচুন সুজ।