বকেয়া বিল পরিশোধ তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থসচিব বরারর বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠি
সোহেল রহমান : [১] বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। অর্থ সংকটে অভ্যন্তরীণ বেসরকারি কেন্দ্রগুলো বিদ্যুতের দাম যথাসময়ে পাচ্ছে না। অন্যদিকে ডলার সঙ্কটে বকেয়া থেকে যাচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাওনা। এ পরিস্থিতিতে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
[২] বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-কে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।
[৩] জানা যায়, এ টাকায় ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানি’র মালিকানাধীন আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে।
[৪] সূত্র মতে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বন্ডের মাধ্যমে দেয়ার পর চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি এবং আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ মোট অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ৪২ হাজার ৭০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ও দেশীয় আমদানি-নির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
[৫] সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান, সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভর্তুকির অবশিষ্ট অর্থ ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ছাড় করা প্রয়োজন বলে বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, জরুরিভিত্তিতে এই ১৭ হাজার ৭০১ কোটি টাকার মধ্যে আগামী মার্চ মাসের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা, এপ্রিল মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, মে মাসের জন্য ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জুন মাসের জন্য ৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
[৬] সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের পাওনা পরিশোধ করতে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির অপরিশোধিত বিল পরিশোধের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট তিন হাজার কোটি টাকা জরুরিভিত্তিতে ভর্তুকি হিসাবে ছাড় করার জন্য চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
[৭] জানা যায়, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। ঝাড়খন্ডের গড্ডা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে।
[৮] জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিনক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবি-কে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। এ নিয়ে গত বছরের শুরুতেই আদানির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিপিডিবি- কে জানানো হয়, পায়রা ও রামপাল কেন্দ্রের চেয়ে তাদের বিদ্যুতের দাম কম হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহেও দেখা গেছে, বাংলাদেশে আদানি যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, তা স্থানীয় বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে ইউনিট প্রতি দাম কম পড়েছে।
[৯] জানা যায়, এদিকে দেশে ডলারের চরম সংকটের মধ্যেও গত ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিদেশি কোম্পানির সাথে ক্রয়চুক্তির অধীনে ১২ মাসের (জুন ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্ষন্ত) বিদ্যুতের চার্জ বাবদ আদানি পাওয়ার লিমিটেড-এর জন্য ১ হাজার ২২৯ কোটি ডলারেরও বেশি প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক ডলারের বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে ১১০ টাকা ।