কেন কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হবে, দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকাইবা কোন যুক্তিতে?
এসএম রহমান জিকু : তরমুজ মোটামুটি সবার প্রিয় রসালো ফল। পবিত্র রমজান মাসের ইফতারের মেনুতে প্রায় সবাই তরমুজের জুস খেতে পছন্দ করেন। বর্তমানে দেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় প্রায় সব ধরনের ফলের দামই নাগালের বাইরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হবে? তিন বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায়ই দেশের বাজারে কেজি দরে ফল বিক্রির অবৈধ প্রথা চালু করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। কয়েকদিন পর শুনবেন কলা, কাঁঠাল, আনারসও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি দরে। এখন বলা হচ্ছে, কৃষকের উৎপাদিত ফল তারা কি কেজি দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে? উত্তর অবশ্যই না। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করার সাহস পায় কোথায়? তরমুজ ব্যবসায়ীরা কিনছেন একশ টাকায় (প্রতি পিস ১০০ টাকায়)। যেখানে প্রতি কেজি তরমুজের দাম দিয়ে পিষ্ট হচ্ছেন দেশের সব স্তরের ক্রেতারা।
পবিত্র রমজান মাসে দেশের ফলের বাজারগুলো রোজাদারদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগের সুযোগ নিচ্ছে দেশের অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণী। তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। এক কেজি দাম ৮০ টাকা, নড়াচড়া নেই। এ কারণে দেশের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে ??১ পিস তরমুজ কিনতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। দেশের সাধারণ ক্রেতাদের তরমুজ সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দিয়ে ১০০০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগের কোনো মানে হয় না। যেখানে প্রতি পিস তরমুজ চাষীরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ একশ টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি কেজি দরে বিক্রি করতে পারে, তাহলে কৃষকরা কেজির দাম পাবে কেন?
এই ধরনের খারাপ বাজার পরিস্থিতিতে হতাশ ক্রেতারা সাধারণ। তরমুজের বাজারের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে একজন সচেতন ক্রেতা সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ৪০ বছরের বেশি জীবনে গত ২-৩ বছর ধরে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হতে দেখেছি। যখন ছোট ছিলাম তখন ওস্তাদদের কথা শুনতাম, ফেরাউন যে একজন, সে পেশায় তরমুজ ব্যবসায়ী। এতো ওজন নিয়ে তরমুজ বিক্রি করতেন। বর্তমানে আমাদের দেশের তরমুজ ব্যবসায়ীরাও ফেরাউনের মতো ওজন করে বিক্রি করছেন। আমি ফেরাউন ও তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, বরই খাইলে আপেল আর আঙুর লাগবে কেন? মিনিস্টারদের পরামর্শ অনুযায়ী, দেশীয় বরই দিয়ে ইফতার প্লেট সাজাতে গিয়েও এদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের ক্ষুধা বাড়িয়েছে। কারণ মন্ত্রী কর্তৃক বাছাইকৃত বরই নামক আইটেমটি কিনতে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা (প্রতি কেজি) দিতে হয়। পেয়ারার দামও কাছাকাছি। দেশি কলার কথা বাদ দিলে, সারু সাগর কলার দামও কমপক্ষে ১২০ টাকা (প্রতি ডজন)।
তরমুজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা। অতএব, আমরা সবাই মেনে নিই ও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ তরমুজের রস পাবে না। সেই ৮০ শতাংশ মানুষেরও শরবত খাওয়ার অধিকার আছে। তারা লেবুর শরবত খেতে চান মাননীয় মন্ত্রী ড. কিন্তু দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ লেবুর শরবত খেতেও কপাল পুড়ছে। এদিকে লেবুর শরবত কিনতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগে ছিলো ২০ টাকা। অন্যদিকে শসা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পাকা পেঁপে ২০০ টাকা কেজি। মাননীয় মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আপেল-আঙ্গুর বাদ দিয়েছি। কিন্তু আমি আমার ইফতার প্লেট সাজাতে বরই চাই। চা লেবুর শরবত এবং শসা। মাননীয় কনসালটেন্ট মন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ আপনি যদি আমাদেরকে বরই, লেবু ও শসা দিয়ে ইফতার প্লেট সাজানোর সুযোগ দেন তাহলে এদেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সর্বোপরি দেশের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারি সংস্থার যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অচিরেই দেশের পণ্য বাজারে স্বস্তি আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবেন।
লেখক : সিএবি ইয়ুথ গ্রুপের সদস্য। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার