দুইদিন পার হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ২৯ পণ্য
মাসুদ মিয়া: [১] প্রতিবছর রমজান এলেই যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। এবারও ব্যতিক্রম ঘটছে না তার। দুইদিন পার হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না ২৯ পণ্য। রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে শুল্ক-কর কমায় সরকার। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।[২] রজমান মাসকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে শুক্রবার (১৫ মার্চ) গরুর মাংস, ছোলা, ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও সুফল মেলেনি। গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে কোনো পণ্যই মিলছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। [৩] বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এমন অভিযোগ তাদের। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করা হয়। অথচ দাম কমানোর ঘোষণা দিলে সেই পণ্য বাজারে কম দামে পেতে অনেক সময় লাগে। এ ব্যাপারে সরকারের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
[৪] গতকাল রাজধানী মতিঝিল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস আগের দামেই ৭৫০ বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৬৪ টাকা। ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেওয়া দাম ১৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ৩৫-৪০ টাকা বেশি দরে ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী বা কক মুরগির সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ২৬২ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। রমজানের আরেক প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছোলা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১২-১৫ বেশিতে ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের নির্ধারিত মূল্য ১০৬ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দরে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।[৫] এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি মুগ ডাল নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দরে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, মটর ডাল ২৫ টাকা বেশি দরে ১৬০ টাকায় ও খেসারি ডাল ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন মুরগির ডিম ১৩৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারে। বাজারে সবজি ও মাছসহ সবকিছু আগের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করার কথা ২৯ টাকায়। কিন্তু বাজারের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকায়, করলা ১০০ টাকায়, পটল ১০০ টাকায়, ঝিঙা ৮০ টাকায়, টমেটো ৬০-৭০ টাকায়, শিম ৪০-৬০ টাকায়, শসা ৬০ টাকায়, ক্ষিরা ৫০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৯০ টাকায়, আদা ২০০ টাকায় ও রসুন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৬০ টাকায়। মাছের বাজারেও সরকার নির্ধারিত দামের কোনো প্রভাব নেই। রুই মাছের কেজি ২৯০ টাকা নির্ধারিত হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতল মাছ ৫০ টাকা বেশি দরে ৪০০ টাকায়, পাঙাস ২০ টাকা বেশি ধরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় আকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, চিতল ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
[৭] এবিষয়ে মতিঝিল বাজারে ক্রেতা সাইফুল বলেন, যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। অথচ দাম কমানোর ঘোষণা দিলে সেই পণ্য বাজারে কম দামে পেতে অনেক সময় লাগে। তিনি বলেন, কোনো সবজির দাম ৬০ টাকার নিচে নেই। মাছ, মাংসের বাজারে যাওয়াই মুশকিল। সরকার দাম বেঁধে দেয় কিন্তু সেই দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তার কোনো তদারকি নেই।
তিনি বলেন, নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সবাই এখন বাজারে পিষ্ট। মানুষ এখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম বাজার করে ও খায়।