তারল্য চাপ, তারল্য ইনজেকশন ও বন্ড ইস্যু-কারেন্সি সোয়াপ
জুবায়ের হাসান : বিভিন্ন উৎসব-সময়ের স্বাভাবিক তারল্যের চাপ এখন অর্থর বাজারে বাস্তব নয়। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিগত হস্তক্ষেপ ধর্মীয় উৎসবের এই শীর্ষ সময়েও কল মানিকে শীতল রাখে। কল-মানি রেট করিডোরের তল থেকে ৮.৪৬ শতাংশে নেমে আসে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নগদ সরবরাহের ফলে আন্তঃব্যাংক ঋণের চাহিদা কমে যায়। রমজান মাস ও ঈদের আগে আনুষ্ঠানিক ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে আন্তঃব্যাংক উৎসের মাধ্যমে প্রয়োজনে ব্যাংকের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ধরনের মাঝে মাঝে ধার নেওয়া মূলত কল-মানি রেটকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গত এক মাস ধরে কল-মানি রেট মন্দার মধ্যে থাকার কারণে এই সময় জিনিসগুলো সম্পূর্ণ আলাদা দেখাচ্ছে। ফাইন্যান্স অফিসার ও ব্যাংকাররা বলেছেন যে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন রূপে তারল্য ইনজেকশন, যেমন বিশেষ বন্ড ইস্যু করা, কারেন্সি-সোয়াপ অব্যাহত রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, বর্ধিত তহবিল ইনজেকশনের উপর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি আরও ভালো হওয়ার কারণে আন্তঃব্যাংক ঋণের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। বিবি-এর সূত্র জানায় যে ১৩ মার্চ, ২০২৪-এ কল-মানি রেট এখন ৮.৪৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪-এ এই হার সুদের হার করিডোরের ৯.৫০ শতাংশে ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করে ৯.৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের রাতারাতি ঋণের গড় সুদের হার হলো ৯.২৭ শতাংশ, ৯.২০ শতাংশ, ৯.০২ শতাংশ, ৮.৮১ শতাংশ, ৮.৪৮ শতাংশ, ৮.৫৫ শতাংশ, ৮.৮৫ শতাংশ, ৮.৫৩ শতাংশ ও ৮.৪৬ শতাংশ। যথাক্রমে ৩ মার্চ, ৪ মার্চ, ৫ মার্চ, ৬ মার্চ, ৭ মার্চ, ১০ মার্চ, ১১ মার্চ, ১২ মার্চ ও ১৩ মার্চ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিবি কর্মকর্তা বলেছেন যে স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও সার সরবরাহকারীদের কাছে জমাকৃত বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য কারেন্সি-সোয়াপ মেকানিজম, বিশেষ বন্ড ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিপুল তহবিল পাচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্যাংকে বিদ্যমান তারল্যের চাপ বিবেচনা করে বিবি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য-সম্পর্কিত সকল আবেদন গ্রহণ করে চলেছে। বিবির পরিসংখ্যান অনুসারে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১২ মার্চ, ২০২৪ পর্যন্ত কারেন্সি-সোয়াপ উইন্ডোর অধীনে তাদের অতিরিক্ত কেনা মার্কিন ডলার বিক্রি করে বিবি থেকে ১৪০ বিলিয়ন টাকার বেশি পেয়েছে। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোও মূল্যের এআর সমর্থন পেয়েছে। বিশেষ বন্ডের বিপরীতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বিলিয়ন টাকা পেয়েছে। কল-মানি ডিলগুলোতে প্রাণবন্ততা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আসন্ন জুলাই থেকে প্রতিদিনের কার্যক্রমের পরিবর্তে সপ্তাহে একবার রেপোতে তারল্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন কল-মানি রেট আক্ষরিকভাবে নিয়ন্ত্রিত। আমরা ব্যাংকগুলোতে আরও ভালো তারল্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এটিকে বাজার-চালিত করতে চাই।
পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বিপরীত কারণ ব্যাংকগুলো গত দেড় মাসে কারেন্সি সোয়াপ ও বিশেষ বন্ড থেকে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন টাকার তহবিল পেয়েছে। এটি সম্ভবত আন্তঃব্যাংক উৎস থেকে ক্রেডিটগুলোর কম চাহিদার পিছনে প্রধান কারণ। কল-মানি হারের পতনের প্রবণতা এখন আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ ধার দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমরানুল হক বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা ছাড়াও আরও কয়েকটি উন্নয়নের জন্যও ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণের চাহিদা মন্দার দিকে রয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন ও অফশোর অর্থায়নে উল্লেখযোগ্য পতনের পাশাপাশি ঋণের নগদ পুনরুদ্ধারের বৃদ্ধির উল্লেখ করেছেন। তাই, ব্যাংকগুলোর তারল্যের চাহিদা কমেছে। তবে ১৫ রমজানের পর তা বাড়বে।
লঁনধরৎভব১৯৮০@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস।
সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস