রাজশাহীতে হাটে লাউ বিক্রি না হওয়ায় কৃষকরা ফেলে দিচ্ছে
মঈন উদ্দিন, রাজশাহী : [১] রাজশাহীতে লাউ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী হাটে এক হালি লাউ আট টাকায় বিক্রি করেন গোচর গ্রামের জহুরুল ইসলাম সোনা নামে এক চাষি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক হালি লাউয়ে পাওয়া যাচ্ছে না একটি মুরগির ডিম। লাউ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিক্রি করতে না পেরে আড়ানী হাটেই লাউ ফেলে চলে গেছেন অনেক চাষি। আবার কেউ কেউ গো-খাদ্য হিসেবে নিয়ে গেছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে শনিবার আড়ানী হাটে।
[২] খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোচর মহল্লার মৃত আমির আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান এক বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। তার লাউ চাষ করতে সার, বীজ, সেচ, শ্রমিক ও মাচা তৈরিসহ খরচ হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। প্রথমে দিকে তিনি প্রতি পিস লাউ বিক্রি করেছেন ৪০-৪৫ টাকায়। মাঝামাঝি সময়ে বিক্রি করেছেন ২৫-৩৫ টাকা প্রতি পিস। শেষ সময়ে ৫-১০ টাকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু শনিবার হাটে কোনো ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে গেছেন। [৩] তিনি শনিবার জমি থেকে ১৬০টি লাউ তুলেছিলেন। লাউ তুলতে লেবার খরচ হয় ১৬০ টাকা। বাড়ি থেকে আড়ানী হাটে নিতে খরচ হয় ১০০ টাকা। বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। তার মোট খরচ হয়ে ৩৬০ টাকা। বাড়িতে টাকা না থাকায় পরে হলুদ বিক্রি করে লেবার ও ভ্যানের খরচ দিয়েছেন। তার মতো অনেকে বাজারে লাউ নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে ক্ষোভে লাউ ফেলে চলে গেছেন। [৪] হাবিবুর রহমান বলেন, আমার জমিতে এখনো ৪০০ পিস লাউ ঝুলে আছে। এগুলো না তুললে প্রায় ৪৮ হাজার টাকায় তৈরি মাচা ভেঙে যাবে। [৫] এদিকে গোচর গ্রামের লাউ চাষি জহুরুল ইসলাম সোনা বলেন, আমি খুব সকালে এসে এক ব্যক্তিকে ৬০টি লাউ দিয়েছি। কত টাকা দেবে কিছুই জানি না। জমিতে কিছু লাউ রয়েছে। এগুলো বিক্রি করতে পারছি না। এক হালি লাউয়ে একটি ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।
[৬] উপজেলার গোচর গ্রামের লাউচাষি লালটু বলেন, হাটে সকালে এক দোকানিকে ৩৬টি লাউ দিয়েছি। বিক্রি শেষে কত টাকা দেবে কিছুই জানিনা। জমিতে কিছু লাউ রয়েছে। [৭] আড়ানী কুশাবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন জমি থেকে ৭৫টি লাউ তুলে হাটে আনেন। সেসব লাউ বিক্রি করতে আড়ানী হাটের সবজি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন বিক্রি করতে না পারলে টাকা দেবেন না। এতে রাজি হয়ে রেখে এসেছেন। [৮] উপজেলার চক বাউসা গ্রামের নাজমুল হোসেন দেড় বিঘা জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, লাউ নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে আড়তে রেখে আসছি। লাউ বিক্রি না হলে লাউয়ের ভারে মাচা ভেঙে যাবে। এমন ভেবে কিছু লাউ মানুষকে ফ্রি দিয়েছি। [৯] উপজেলার বাউসা মিয়াপাড়া গ্রামের পাইকারী লাউ ব্যবসায়ী সুজন আলী বলেন, গত সপ্তাহে ৬০০ লাউ নিয়ে ঢাকায় গিয়ে গড়ে ৭ টাকা করে দরে বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। বাঘা ও আড়ানীর হাটে লাউ কিনিনি। হাটে পাইকারি লাউ কেনার কোনো ক্রেতা ছিল না। তাই শনিবার হাটে লাউ কিনিনি।
[১০] লাউ ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার প্রতি পিচ সাড়ে ৬ টাকায় ২০০ লাউ কিনে ভ্যানে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেছি। এতে লাভ হয়নি, তবে কোনোমতে বিক্রি শেষ করেছি।
[১১] উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। এ সময় শীত কমে যাওয়ার কারণে লাউয়ের চাহিদা কমে গেছে। তবে এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লাউয়ের উৎপাদন হয়েছে।