গরুর মাংসের মূল্য নিয়ে তৈরি হওয়া গোলকধাঁধার সমাধান কোথায়?
রবিউল আলম
মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানসহ একাধিক মাংস ব্যবসায়ী ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে খলিলুর রহমানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। জনসেবার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এখন খলিল। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি দিয়ে ৬০০ টাকা গরুর মাংস, ৯০০ টাকায় খাসির মাংস বিক্রি করছে। কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলো, ২৯ পণ্যের মূল্যনির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সাথে এটাও বলা হয়েছে ২০১৮ এর (ঝ) ধারা ক্ষমতাবলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্যনির্ধারণ করেছে। আমার প্রশ্ন, এই যৌক্তিক মূল্যনির্ধারণ কীসের মাপকাঠিতে?
গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা, খাসির মাংস ১০০৩ টাকা ৫৬ পয়সা সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন যোগ্য কি-না? ৫৯৫ টাকা এবং ৬০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকার কী হবে? এই বিষয় উল্লেখ নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কার সাথে আলোচনা করে এই ঘোষণা দিলেন? ইতোমধ্যে ফার্মার এসোসিয়েশন ৬৫০ টাকা মাংসের মূল্যনির্ধারণ করে দিয়েছিলো, এক কেজি মাংস তারা বিক্রি করেনি। উপরন্তু একরাতে ৫৫০ টাকার মাংস ৬৫০ টাকা হয়ে গিয়েছিলো। ফার্মার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভর্তকি আদায় করে এখন মাংস বিক্রি করছে ৬০০ ও ৯০০ টাকায়। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিমের ঘোষণা বাস্তবায়ন করার জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? আমার জানা নেই।
সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রশংসার দাবী রাখে, না পারলে সরকারকে বিব্রত করার জন্য জবাবদিহি করবে কে ? ৫৯৫ টাকার মাংস ওলা এবং সরকারের ন্যায্য মুল্যের ৬০০/৯০০ টাকার মাংস ৬৬৪ টাকা এবং ১০০৩ হয়ে গেলে আমরা কার কাছে জবাব চাইবো? মাংসের মূল্যনিয়ে গোলকধাঁধায় সরকার কোনপথ বেছে নিবে? কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম, বলতে পারেন? ৪৫ বছর মাংসের মূল্যনির্ধারণ করে দিয়ে ছিলাম,সর্ব শেষ ৩২০ টাকা। ২০১৮ সালে মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে সিটি করপোরেশন উন্মুক্ত করে দিলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়ীত্ব নিলেন না। ৩২০ টাকার কেজির মাংস দাপে দাপে ৮০০ টাকা হয়ে গেলো। সিন্ডিকেটের অংশ হলেন ফার্মার’রা। মাংসের দাম কম হলে গরুর দাম কমে যায়। কোরবানীকে সামনে রেখে ফার্মারদের মাথায় হাত। পশু লালনপালনের কোনো নীতিমালা না থাকায়, যখনতখন বাজার থেকে গরু মহিষ কিনে নিয়ে বাজারকে অস্থির করা হচ্ছে।
বিদেশি পশু আমদানির পথ অবরুদ্ধ। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে চাইলে মাংসের বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে চাইলে একটি বৃহৎ আলোচনার প্রয়োজন। রমজান বা কোরবানির ঈদের আগে আগে পশু আমদানির অনুমতি দিতে হবে। না হলে প্রতি বছর কোরবানির গরু নিয়ে টানাটানি বন্ধ করা যাবে না। রমজানের মাংসের অভাব পূরণ হবে না। আইনের মাধ্যমে হুকুম দেওয়া যাবে, সিন্ডিকেট বন্ধ যাবে না। কোরবানির গরু জন্য রশি টানাটানি সৃষ্টি হয় ফার্মারদের ইচ্ছামতো। গত বছর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীকে ভুলপথে পরিচালিত হতে হয়েছে। সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছিলো। কিন্তু ভারত, মায়ানমার থেকে গরু, মহিষ আসাতে কোরবানি দাতাদের স্বস্তি। আইন শুধু হুকুমে বাস্তবায়ন করা যায় না, আইন বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হয়। আলোচনা ছাড়া হবে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আইন থাকলেই প্রয়োগের জন্য সময় বেছে নিতে হবে। সময় দিতে হবে। অযথা ধুমপান মুক্ত আইনের মতো লোক হাসানোর আইন দিয়ে সমাধান হবে না।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি