ভোক্তা, ব্যবসায়ী, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সরকারের দায়
আসজাদুল কিবরিয়া : বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভক্তদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে পবিত্র রমজান মাস পালন শুরু করেছেন। এখানে হঠাৎ করে দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়াটা এই মাসে অস্বাভাবিক নয়। বিগত বছরের সংবাদপত্রের শিরোনাম যেমন ‘রমজানের আগে পণ্যের দাম বেড়েছে’, ‘রমজানে দাম তীব্র বৃদ্ধি পাচ্ছে’, ‘সরকারের পদক্ষেপ রমজানের আগে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে’। ভোক্তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে দাম কারসাজির জন্য ব্যবসায়ীদেরও দায়ী করেন তারা। ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষারোপ করে- খুচরা বিক্রেতারা পাইকারী বিক্রেতাদের অতিরিক্ত মূল্যের জন্য অভিযুক্ত করে, পাইকাররা আমদানিকারক ও উৎপাদকদের দিকে আঙুল তোলে। আমদানিকারকদের দাবি পরিবহন ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি তাদের দাম বাড়াতে বাধ্য করছে। অনেক ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পক্ষের চাঁদাবাজি দায়ী বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জোর দিয়ে বলে যে রমজানে দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য সূত্রের পরামর্শ দেয়, যেমন মুসলিমরা তাদের রোজা ভাঙার সময় ইফতারে খেজুরের পরিবর্তে স্থানীয় ফল গ্রহণ করে। এই সবগুলো বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির জন্য একটি রেসিপি তৈরি করে ও কখনও কখনও রমজানের সময় ভুলের একটি কৌতুক তৈরি করে যা আত্মসংযম, ত্যাগ, ভক্তি, ক্ষমা ও যত্ন সম্পর্কে। দেশের অব্যবস্থাপিত ও ভুলভাবে ডিজাইন করা গণপরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে ঢাকায় বিশৃঙ্খলার আরেকটি প্রাথমিক উৎস। রমজান মাসে রাস্তা ও রাস্তায় নিয়মিত দুর্বল যানবাহন নৃশংস হয়ে ওঠে। যা লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় কাটাতে বাধ্য করে। অনেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রোজা ভাঙতে সময়মতো বাড়িতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। বছরের পর বছর ধরে নতুন রাস্তা ও ফ্লাইওভার সত্ত্বেও এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঢাকায় সদ্য চালু হওয়া মেট্রোরেল পরিষেবা যা ওভারহেড দিয়ে চলাচল করে, রাজধানী শহরের রাস্তাগুলো মানুষের প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত দুই চাকার গাড়ির মতো ক্রমবর্ধমান সংখ্যক পরিবহনে যানজটপূর্ণ। এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি, কয়েকটি ভিআইপি সড়ক ছাড়া রাস্তায় এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে অসহায় মনে হচ্ছে। পাবলিক বাসগুলো ধাক্কাধাক্কি করে। তাই রমজানে যাত্রীদের দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে যায়।
অস্থায়ী বিক্রেতাদের ফুটপাথ ও রাস্তার ধারের দখলও রমজান মাসে বিশৃঙ্খলা বাড়ায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের একটি অংশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, কর্মীদের মধ্যে যোগসাজশের জন্য ধন্যবাদ। অবৈধ টোলের বিনিময়ে তারা অবৈধ অস্থায়ী বাণিজ্যের জন্য সর্বজনীন স্থান প্রদান করে যার ফলে পথচারীদের অনেক সমস্যা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ রমজানে ঢাকায় আসেন কিছু কাজ ও ব্যবসা করতে। তাদের অধিকাংশই এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এইভাবে শহরটি পবিত্র মাসে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপের সম্মুখীন হয়, যা জিনিসগুলোকে কঠিন করে তোলে। ফুটপাথ ও রাস্তার ধারে অস্থায়ী ইফতার বিক্রির আউটলেটগুলো বিশৃঙ্খল রমজানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা প্রায় অনুপস্থিত। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ ৪৬ জনের মৃত্যু হওয়ার পরেও মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার ঝুঁকির বিষয়ে খুব কমই চিন্তা করেন। খোলা রাস্তায় রান্নার তেল পোড়ানো বিপজ্জনক। রমজান মাসে রোজা রাখা শুধুমাত্র খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের নিয়ন্ত্রণ নয় বরং শ্রবণ, দৃশ্য, অনুভূতি, চিন্তাভাবনা ও কথা বলাও জড়িত। এটি আচরণ ও মনোভাবের সংযম যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে ব্যর্থতা কেবল বিশৃঙ্খলা বাড়ায়।
ধংলধফঁষশ@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস