ব্যাংক একীভূত হলে কি আর্থিক খাতের সমস্যার সমাধান হবে?
জাহিদ হক : ঋণ কেলেঙ্কারি ও ব্যাঙ্কের টাকা লুণ্ঠন জনসাধারণের আলোচনার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। কিছু নীতিনির্ধারক, যারা সম্প্রতি সচেতনভাবে ব্যাংকিং শিল্পে অবাঞ্ছিত উন্নয়নের কোনো উল্লেখ এড়িয়ে গেছেন, তাদের গভীর হতাশা ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। ব্যাংক ও ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো পরিপূরক জুটি। বেঁচে থাকার জন্য তাদের একে অপরের প্রয়োজন। তবে তাদের সম্পর্ক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত অবাঞ্ছিত উন্নয়নের জন্য খারাপ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়া ও সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে বড় ঋণ বিতরণ অনেক ব্যাংককে তাদের নতজানু হতে হয়েছে। বৃহৎ ঋণ বা ঋণ পরিশোধে বিলম্বের জন্য রাজনৈতিক সংযোগ ও সরকারি হস্তক্ষেপের ব্যবহার একটি সাধারণ ব্যাপার। ব্যবসায়ী নেতারা বোধগম্য কারণে এখন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ও ঋণ কেলেঙ্কারি সম্পর্কে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই বলে মনে হচ্ছে। কিছু শীর্ষ ব্যবসায়ী যারা ব্যাংকের সঙ্গে তাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তারা ঋণ খেলাপি বা ব্যাংকের অর্থ লুণ্ঠনের কলঙ্ক মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তারা জনসমক্ষে এই বিষয়ে তাদের অভিযোগ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনায় তারা যারা কোটি কোটি টাকার ব্যাংক তহবিল লুট করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অর্থনীতিবিদরা বহু বছর ধরে ব্যাংকিং খাতের অস্বস্তিকর উন্নয়নের দিকে ইঙ্গিত করে আসছেন। কেউই তাতে কর্ণপাত করেনি। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারও অনেক ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ আটকে রাখার জন্য স্কিমারদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। তারা একসঙ্গে ব্যাংকিং খাতকে প্রবাহিত করার জন্য সাম্প্রতিক অতীতে গৃহীত অনেকগুলো ভালো পদক্ষেপ বাতিল করেছে। বিভিন্ন মহলের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে অযাচিত প্রভাবে আসা কেন্দ্রীয় ব্যাংক একের পর এক নতুন ব্যাংক খোলার লাইসেন্স দিয়েছে। এতে কিছু নতুন ব্যাংক গভীর সংকটে রয়েছে। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা সংকটজনক। কেলেঙ্কারির প্রকাশ ও বৃহৎ আকারের ঋণ খেলাপি সত্ত্বেও সমস্যাটির প্রতি অবিবেচক উদাসীনতার বিষয়টি সর্বত্র লক্ষ্য করা গেছে। গত বছরের শুরুর দিকে ডলারের গভীর সঙ্কটের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করে। তহবিলের বেলআউট ঋণের সঙ্গে ট্যাগ করা শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার।
এখন জোরে জোরে যা উচ্চারণ করা হচ্ছে তা হলো দুর্বল ব্যাংকগুলো তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। এটি করতে ব্যর্থ হলে তারা শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ‘জোর করে’ একীভূত হওয়ার জন্য প্রার্থী করবে। উন্নত দেশগুলোতে, একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো তাদের হিসাবের ভিত্তিতে এটি করে ও কেউ তাদের এটির জন্য যেতে বাধ্য করে না। এখানে ব্যাংকগুলোর স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়া বাস্তবিক কারণে অত্যন্ত অসম্ভাব্য বলে মনে হয়। এতে প্রচুর গ্রাউন্ডওয়ার্ক ও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হবে। বর্তমানে যা উদ্বেগজনক তা হলো খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি) নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ উদাসীনতা। এএমসি বা ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্ট ব্যবহার অনেক দেশে একটি সাধারণ অভ্যাস। এই ধরনের একটি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া এখানে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বড় ও প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে খুব কমই কাজ করবে। একীভূতকরণ বিড কিছু ডুবে যাওয়া ব্যাংককে উদ্ধার করার লক্ষ্যে কতোদূর যাবে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে চলমান ব্যাংকিং খাতের অস্থিতিশীলতার পিছনে কয়েকটি মূল কারণ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলা হয়নি। উচ্চ পরিমাণের অ-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) উপস্থিতি ও বড় ঋণ কেলেঙ্কারির সমস্যা সমাধান না করা পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে অবনতির দিকে যাবে। ুধযরফসধৎ১০@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস।
সূত্র: দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস