দেশে টাঙ্গাইল শাড়ীর চাহিদা বেড়েছে
ফরিদা আখতার
আপনারা কি জানেন সারা বছর তাঁতীরা যা শাড়ী বোনেন তার শতকরা ৮০ ভাগই বিক্রি হয় ঈদের মৌসুমে, ঈদুল ফিতরের সময়। অন্যান্য সময়গুলো হচ্ছে পয়লা বৈশাখ, ফাল্গুন, বিয়েশাদির মৌসুম, দুর্গা পূজা ইত্যাদী সময়ে। তবে ঈদটাই আসল বিক্রির সময়। তাই সচেতন নাগরিকের কাজ ঈদের কেনাকাটার সময় নিজের দেশের তাঁতীদের কথা খেয়াল রাখা। সামাজিক উৎসবের বেচাকেনা যেন সমাজের উৎপাদনশীল শক্তির বিকাশে ভূমিকা রাখে সেটা মনে রাখা।
শপিং মলে গিয়ে যা চোখে ভাল লাগছে তাই কিনছেন অনেকে। কেউ কেউ ভারতীয় শাড়ীর খোঁজ করেন। দোকানদার যেমন এগিয়ে দেন তেমনি ক্রেতারাও কিনে ফেলেন। এটা দেখে লজ্জা পাই। দুঃখও লাগে। নিজ দেশের তাঁতের কাপড় কিনবার কোন দায় বোধ না করলে ভোক্তা হিশাবে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার আমরা কারণ হয়ে উঠি। কিন্তু কেন এমন হবে? কেনার আগে কি ভেবে দেখা যায় না যে ভোক্তার একটা অর্থনৈতিক শক্তি আছে, চাইলে আমরা তা দেশের কাজে ব্যবহার করতে পারি। বিশেষত হাতে বোনা তাঁতের কাপড়ের ক্ষেত্রে। নিজেদের দক্ষতা ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নাগরিক দায়িত্ব। বাংলাদেশের তাঁতের শাড়ী কেনার মাধ্যমে কত তাঁতীর স্বপ্ন আমরা পূরণ করি ঈদের সময় সেটা ভাবতে পারার আলাদা আনন্দ আছে। দেশের তাঁত শিল্পের সাথে জড়িতদের জীবিকা রক্ষার চেষ্টা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে জড়িত। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও চলমান রাখার ওপর আমাদের উন্নতির সম্পর্ক আছে। এর মধ্যে দেশপ্রেমও আছে।
টাঙ্গাইলের শাড়ী নিয়ে কিছুদিন হৈ চৈ হল এর ভৌগলিক নির্দেশিকা বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেটর নিয়ে। ভারত আমাদের টাঙ্গাইলের শাড়িকে নিজেদের বলে দাবি করছে, অথচ টঙ্গাইল বাংলাদেশের জেলা, ভারতের অংশ নয়। টাঙ্গাইলের শাড়ি একমাত্র বাংলাদেশের আর কারো নয় এই প্রত্যয় নিয়ে টাঙ্গাইলের তাঁতীরা শাড়ী বুনছেন। এবার ঈদের কেনাকাটার প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম। তাঁতীদের সাথে দেখা হয়েছে। তাঁরা জানালেন এই শাড়ীর চাহিদা নাকি বেড়েছে। ভাল খবর। উত্তরবঙ্গ ও অন্যান্য এলাকার বেপারীরা এসেও শাড়ী নিয়ে যাচ্ছেন। একজন বললেন, বুনে শেষ করতে পারছি না। শুনে খুব ভাল লাগলো।
এই ভাল লাগা দীর্ঘস্থায়ি হবে যদি ঈদে টাঙ্গাইলের তাঁতীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিতে পারি। এবাং সেটা পারবো তখনই যখন ঈদের কেনা কাটায় আমরা টাঙ্গাইলের শাড়ী তালিকায় রাখি। হ্যাঁ ঈদ বড় একটা সুযোগ।
এই পোস্ট যদি টাঙ্গাইল শাড়ির বিজ্ঞাপন বলে মনে হয়, তাহলে বলব, হ্যাঁ আমি তো বিজ্ঞাপনই করছি। টাঙ্গাইলের শাড়ির বিজ্ঞাপন করা নাগরিক কর্তব্য বোধ থেকে এসেছে। জানি দেশকে যারা ভালবাসেন তাঁরা সাড়া দেবেন।
আসুন আমরা টাঙ্গাইলের শাড়ী কিনে ধন্য হই । লেখক: উন্নয়ন ও মানবাধীকার নেত্রী