শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন রীতিমতো বাজারে বড় ধস নেমেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। [২] একদিনে ডিএসই প্রধান সূচক ৮৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এদিকে আর ২১ দিনবাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিল এবার শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে। কিন্তু চাঙ্গা না হয়ে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। [৩] ঈদকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হাহাকার বেড়েছে। এদিকে দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিলেও তা কোন কাজে আসছে না। ফলে প্রতিদিন পুঁজি হাড়াচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
[৪] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের শেয়ারবাজারে। মাঝে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের শেয়ারবাজারে চলছে অব্যাহত দরপতন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারের এমন দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। [৫] এবিষয়ে বিনিয়োগকারী তানভির বলেন, সামনে ঈদ এখন যদি বাজার ভালো না হয়। ঈদ কিভাবে করবো আমরা বিনিয়োগকারীরা। গত একমাস ধরে দরপতনে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। বাজারে প্রতিদিন যে হারে পতন হচ্ছে তাতে আবারও পুঁজি হারানোর শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছি। [৬] জামান নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রতিদিনই ভাবি আজ হয়তো শেয়ারের দাম একটু বাড়বে। সকালের দিকে দাম একটু বাড়লেও দিন শেষে দরপতন হচ্ছে। জামান বলেন, প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছি আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ঈদকে সামনে রেখে আমাদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে হাহাকার বাড়ছে। [৭] গতকাল ডিএসই’র মতো অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২৪ কার্যদিবসের মধ্যে ২১ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে একই সপ্তাহেই ডিএসই’র বাজার মূলধন ৪৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। [৮] গতকাল শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসই’র প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে ৫ মিনিটের মধ্যে দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম কমার তালিকা বড় হয়। ফলে রীতিমতো ধস দিয়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন শেষ হয়।
[৯] দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৩ মে’র পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২১ সালের ২৩ মে ডিএসই’র প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৮৭ পয়েন্ট। এরপর সূচকটি আর এত নিচে নামেনি।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। [১০] ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৬ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনেটা লিমিটেড, বেস্ট হোল্ডিং, এস এস স্টিল, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং লাভেলো আইসক্রিম।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানিহলো: সেন্ট্রাল ফার্মা, ডেফোডিল কম্পিউটার, মুন্নু ফেব্রিক্স, ফু-ওয়াংসিরামিক, আনলিমা ইযার্ন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, এফবিএফআইএফ ও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:-পিপলসলিজিং, রবিঅজিহাটা, খুলনা প্রিন্টিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তমিজুদ্দীন টেক্সটাইল, গোল্ডেনসন, উসমানিযাগ্লাস, বিবিএস, ওরিয়ন ইনফিউশন ও গোল্ডেন হারভেস্ট।
[১১] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।