ছোট্ট পরীদের মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবো কী করে!
আব্দুস সালাম
মশা নিয়ে মশকরা করার দুঃসাহস আমি দেখাবো না, কেন না মশারির ভেতর বসেই এ পোস্ট লিখছি। মশার উপদ্রবে আমরা নগরবাসী রীতিমত অতিষ্ঠ। মশারির ভেতরে বসে তো আর ইফতার, তারাবি, সেহরি করা যায় না। ঢাকা উত্তরের মেয়র মহোদয় ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ঈদের পর মশক নিধনে নামবেন। এখন তিনি খাল উদ্ধার ও লেক পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। এখন চলছে গুলশান লেক পরিচ্ছন্নতার কাজ। ক’দিন আগে উনি অবৈধভাবে নির্মিত ১০তলা একটি ভবন ভেঙে দিয়ে রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধার করে ওনার সদিচ্ছা বা শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তাই ওনার সদিচ্ছার কোন ত্রুটি দেখি না। ওনাকে অভিনন্দন। তবে যদি আবাসিক এলাকাগুলো থেকে বর্জগুলো দ্রুত অপসারণ করা হয়। সুয়ারেজ ড্রেনগুলো পরিস্কার করে পানি প্রবাহ চলমান রাখা হয়। যথারীতি প্রতি বিকেলে ড্রেনগুলোতে নির্ভেজাল ওষুধ স্প্রে করা হয়, তাহলেও আমরা নগরবাসী (উত্তরাবাসী) কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই নগরবাসীর একটা বড় অংশ অস্বাস্থ্যকর/বিষাক্ত মশার কয়েলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ মশা মারার ব্যাট কিনে তামিম মুশফিকদের মতো হাত চালাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও দুর্বল বা নকল জিনিস বাজারে ছেড়ে বর্ধিত চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি লাভ গুনছে। নইলে ট্রান্সকম বা ট্রান্সটেক এর মতো কোম্পানিরাও ৫৫০ টাকার মশা মারার ব্যাট (ইলেকট্রনিক) বানিয়ে বাজারে ছাড়বে কেন? পরপর দু’দিন তাদের কোম্পানির নাম খচিত দু’টো ব্যাট এনে রীতিমত মশাদের মশকরার শিকার হলাম। প্রাথমিক চার্জ দিয়ে কয়েকটা মশাকে কাবু করার পরই চার্জ শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার চার্জে বসালে হ্যান্ডেল গরম হয়ে ব্যাট অকেজো হয়ে পড়ে। তখন মশার গায়ে লাগালেও কাজ হয় না। মশারা তখন হয়তো বলে, মশকরা করেন ক্যান? পরদিন দোকানে গিয়ে ব্যাট ফেরত দিয়ে এসেছি, কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেছি। রাগে মূল্যটাও ফেরত চাইনি।
আতিকুল ইসলামেরা ভালো কিছু করতে চান। আনিসুল হকও চেয়েছিলেন। পারেননি। কারণ, উপযুক্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ছিল, এখনও আছে। সেবাদাত্রী সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নগর সরকারের বিকল্প নেই। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস গ্যাস, টিএন্ডটি, রাজউক, পুলিশ- সবাই এক কমান্ডে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমবে এবং স্বস্তি বাড়বে। সন্ত্রাস, হাইজ্যাকিং, ইভটিজিং সবই কমবে। নগর সরকারকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে, বিচারিক ক্ষমতাসহ। গলির ধারে, রাস্তার মোড়ে, মেয়েদের স্কুল কলেজের পাশে কিংবা পার্কের অহেতুক ও অসময়ের আড্ডাবাজি বন্ধ করতে হবে। কিশোর গ্যাংগদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক কথায় সর্বস্তরে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।
সেদিন দেখলাম, পৃথিবীর সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ ঢাকায়। বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত শিসা ভাসছে। বায়ুমন্ডল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বক্ষব্যাধি ও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বহুদিন থেকে শুনে আসছি, ঢাকার চারপাশের ইটভাটাগুলোকে অপসারণ করা হবে। নগরে চলাচলকারী লক্কর ঝক্কর বাসগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। চলবে আধুনিক বড়সড় বাস বা ট্রাম্প। তিন চাকার বেবি ট্যাক্সি/অটো/রিকশা উঠে যাবে। কৈ, কোনটার বাস্তবায়ন তো দেখছি না? এজনমে কি দেখে যেতে পারব? কিন্তু এটা করা সম্ভব, খুব সম্ভব। আর এখানেই বায়ুদূষণ ও যানজটের সমাধান।
যাক, মশার কথা বলতে গিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেল। তবে কোনটাই অপ্রাসঙ্গিক বা অসমসাময়িক নয়। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, তথা সরকার বাহাদুর যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। সবেমাত্র নির্বাচন শেষ হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এখনই সময়।
দূর যাহ, আমি চিন্তিত আমার সমস্যা নিয়ে। মাঝে বাড়তি কথাগুলো এসে পড়লো কি করে? ঈদের আগে দু’টো ছোট্ট পরী আমার ঘরে আসবে। ওদের মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবো কি করে! হে আল্লাহ, আমাদের সহায় হও। (লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মেজর)