এমডি আলী জামান
হলমার্কের তানভীর, তার স্ত্রী জেসমিনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলো সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে- মেরে দেয়ার জন্যে। তবে এবারের এই রায়ের বিশেষত্ব হলো- এই মামলায় হলমার্ককে অন্যায্য সুবিধা দেয়ার অভিযোগে আদালত সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন এমডিসহ আরো দশ জনকে দীর্ঘমেয়াদী জেল দিয়েছে।
মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে দিনের পর দিন এইটা জানান দেয়া হচ্ছে যে, ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয় না। মেরে দেয়। কথাটা অনেকাংশে ঠিক।তবে বাস্তবতা হলো- ব্যবসায়ী ছাড়াও এই কথিত ঋণের পার্সেন্টেজ রাজনৈতিক আর ব্যাংকাররাও পায়। একটা অশুভ নেক্সাস সৃষ্টির মাধ্যমে এই অর্থ ব্যাংক থেকে বের করা হয়- ঋণের নামে। এখন প্রশ্ন হলো, ব্যাংক কি তবে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদেরকে ঋণ দেবে না? ঋণ না দিলে- ব্যাংক চলবে কিভাবে?
বড় শিল্পে ঋণ দিলে ব্যাংকের ঝুঁকি থেকেই যাবে। কারণ, বড় শিল্পঋণে ব্যাংকগুলো পর্যাপ্তসহ জামানত নিতে পারেনা। কেবল ছোট শিল্প আর ব্যবসার বিপরীতেই পর্যাপ্ত সহ- জামানত নিতে পারে। এরা ঋণ খেলাপী হলে গলা টিপে ধরে। জামানতকৃত সম্পদ বেঁচে সুদসহ ঋণ আদায় করে নিতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে। সেই হিসাবে তাদের উচিৎ স্বল্পমেয়াদী ঋণ দেয়া। দীর্ঘমেয়াদি শিল্পঋণ দেয়া ঠিক নয়। কারণ, ১০০০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে ২০০ কোটি টাকারও জামানত থাকে না। সেক্ষেত্রে খেলাপি হলে ঋণ আদায় করবে কিভাবে? এরপরে আছে ঋণের সুদের হারের প্রশ্ন। ১৪-১৫ শতাংশ ইন্টারেস্ট দিয়ে আর যাই হোক, শিল্প হয় না। তাহলে দেশে শিল্প হবে কিভাবে?
এর উত্তর হলো- শিল্পের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক বা ফান্ড থাকতে হবে।ব্যাংক বড় জোর ৩০ শতাংশ দেবে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ দেবে উদ্যোক্তা আর শেয়ারবাজার। এর জন্যে একটা ভাইব্রেন্ট শেয়ারবাজার তৈরি করতে হবে। ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি অস্থির পাকিস্তানের শেয়ারবাজারও কিন্তু উন্নত। আমাদের দেশে সেইটা আর ইহ জনমে সম্ভব হবে- এমনটা মনে হয় না…
লেখক : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এসাসিয়েশনের সভাপতি