শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে : ডা. প্রবীর কুমার সরকার
শাহীন খন্দকার : [১] দেশে মাথা ও ঘাড়ের রোগের জটিলতা বাড়ছে। মাথা ও ঘাড়ের জটিলতা থেকে দেখা দিয়েছে ক্যান্সারের মতো রোগও। হতাশার খবর হচ্ছে- বাংলাদেশে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে বাংলাদেশের শিশুরা যতো ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত তার মধ্যে ১০-১২ শতাংশই হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার। [২] শিশুদের মধ্যে এই ক্যান্সার প্রতিকারের বা প্রতিরোধের উপায় প্রাথমিক পর্যায়ে যদি চিহ্নিত করা যায় তাহলেই সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আশাবাদি, দ্রুত জানা যাবে কেনো শিশুরা রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাপ্ত বয়স্করাও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
[৩] এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, শের-ই বাংলানগর ঢাকা শিশু পালমনোলজী বিভাগের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, মানুষের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত অত্যন্ত ৩০টি অংশে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। [৪] শিশুদের যেসব স্থানে এই ক্যান্সার হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নাক, নাকের গহ্বর, সাইনাস, ঠোঁট, জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভেতরের অংশ, মুখের তালু, গলা, কণ্ঠনালী, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, টনসিল, লালাগ্রন্থি ও হেড নেকের ত্বক।
[৫] বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্স অ্যান্ড হসপিটালের সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকাশিত এবং ২০১৭ সালের রির্পোটের তথ্যে প্রকাশ ক্যান্সার আক্রান্ত পুরুষ ১০ জনের মধ্যে অত্যন্ত ৪ জনের মধ্যে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারের যোগসুত্র রয়েছে।
[৬] রাজধানীর মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক রেডিওথেরাপি ডা. কাজী মুশতাক হোসেন বলেন, মানুষের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত অন্তত ৩৯টি স্থানের অংশের ক্যান্সারকে এক সঙ্গে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে।
[৭] তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয়সহ সঠিক সময়ে রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন, তাহলে শতভাগ নিশ্চিত রোগী সুস্থ্য হয়ে উঠবেন। তবে দেরীতে যদি চিকিৎসা সেবা শুরু করেন তাহলে ঝুঁকি থাকে। রোগের লক্ষণ সর্ম্পকে তিনি বলেন, মাথা ও ঘাড়ের একেকটি অংশের ক্যান্সারের একেক ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।
[৮] উল্লেখ্য যে কারোর যদি গলায় দীর্ঘসময় ধরে ব্যাথা খাবার খেতে বা গিলতে কষ্ট। শ্বাস-নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে গিয়ে শব্ধ হওয়া, নাকে কোন রকম গন্ধ বা সুগন্ধি পাচ্ছেন না, সব সময় কাশি,জিহ্বায় বা মুখোগহব্বরে কোন স্বাদ নেই, সেই সঙ্গে লাল ক্ষত হওয়া যা দুই সপ্তহেও সারছে না। সেইসঙ্গে দীর্ঘসময় সর্দি এবং নাক দিয়ে রক্ত আসা, গলার সুর চেইঞ্জ হয়ে যাওয়া এবং আপনার কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। তাহলে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। [৯] ডা. মুশতাক হোসেন আরো বলেন, মুখের কোনো অংশ চোখের ওপরে, ঘাড়ে, গলায়,নাকের চারপাশ, কানের আশপাশ বা চোয়াল ফুলে যাওয়া বা মুখের এক পাশ ফুলে যাওয়া, যা দীর্ঘদিনেও সারছে না।
[১০] মুখে ব্যথা, মুখ খুলতে সমস্যা, মুখে অসারতা বা মুখ ঝুলে যাওয়া কানে ব্যথা, এক কানে শুনতে সমস্যা, দাঁতে ব্যথা এবং প্রায়-ই জ্বর ও দীর্ঘদিন মাথাব্যথা। এ ধরণের চিকিৎসা দেওয়ার আগে রোগীর ব্যাক্তিগত পারিবারিক ইতিহাস জেনেই চিকিৎসক চিকিৎসা শুরু করেন বলে জানালেন তিনি। [১১]এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোন অংশে ক্যান্সার সেই তথ্যের ভিত্তিতে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পিটিই, ন্যাজো অ্যান্ডোস্কোপি, সেইসাথে রক্ত ও প্রস্রাবের বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়।পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ঔষধ দিবেন, না-অস্ত্রোপচার না, বায়োপসি করালে ভালো হবে।
[১২] রোগীর সার্বিক রির্পোটের ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা শুরু করেন। আবার কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ ইমিউনোথেরাপির পরাপর্শ দেন। সব নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর বলে জানালেন ডা. মুশতাক।
[১৩] তিনি বলেন, তবে ক্যান্সার থেকে একবার সুস্থ হলেই আবার ফিরে আসতে পারে। আর এজন্য চিকিৎসকরা সব সময় ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হওয়া রোগীদের প্রতি অনুরোধ করেন, সব সময় চেকআপে থাকার জন্যে।