ঈদযাত্রায় স্বস্তির আশা, শঙ্কা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন হয়েছে বহু আগে। পদ্মা সেতুও হয়ে গেছে। ফেরি আর লঞ্চে নেই সেই চিরচেনা ভিড়। পদ্মা সেতুতে রেল চলছে। ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইনও হয়ে গেছে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে। কাজ শেষ হয়েছে ঢাকা-এলেঙ্গা চার লেনের। অনেকটাই গুছিয়ে আনা গেছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরে যাওয়ার বিআরটি প্রকল্পের কাজ।
[২] সবে শুরু হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প। ঈদ যখন আসন্ন, তখন এ সড়কে উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। ফলে যেসব পথে ঈদের বাড়তি চাপ নামে, তার প্রায় সবগুলোতে স্বস্তির আশা থাকলেও শঙ্কা আছে এ মহাসড়ক নিয়ে। উন্নয়ন কাজের কারণে এ পথে ভোগান্তি হয় কতটা, তা নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ।
[৩] মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর ছুটে যায় গ্রামে। পথে পথে ভোগান্তি আর যানজটে আনন্দের ঈদযাত্রা হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। [৪] তবে এবার মহাসড়কে ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) দফায় দফায় বৈঠক করছে। সব উদ্যোগের পরও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কিছুটা জটলা হবে বলে শঙ্কা রয়ে গেছে। [৫] ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত। তারপরও হঠাৎ করে মানুষ সড়কে নেমে এলে জটলা বা সমস্যা হয়। এ সমস্যা মিনিমাম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছি- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান [৬] রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার সড়কে সাত বছর ধরে চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। চলমান এ প্রকল্পেরই কিছু কিছু লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ পথে তেমন জটলা হবে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
[৭] ভোগড়াসহ অনেক ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদ সামনে। যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ না হয় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি বিআরটি প্রকল্পের কারণে ঈদে দুর্ভোগ হবে না- প্রকল্প পরিচালক ইলিয়াস শাহ
[৮] এ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। তবে কাজ চলমান থাকায় কয়েক বছর ধরে এ পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা লেগেছে। পরিস্থিতি সামলাতে কখনো বাড়তি সময় নিয়ে যাত্রা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কখনো রেলপথে দেওয়া হয়েছে বাড়তি ট্রেন। এবার এ পথ পুরোপুরি স্বস্তির না হলেও কিছু লাঘব হবে দুর্ভোগ। এরই মধ্য এ পথের বেশ কিছু অংশ চালু হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি লেন অনানুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড (শিববাড়ী) এলাকা থেকে ঢাকামুখী লেনটিও খুলে দেওয়া হয়।
[৯] বিআরটি প্রকল্পের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের ময়মনসিংহমুখী একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী সব যানবাহন এই লেন ব্যবহার করে ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তার দীর্ঘ যানজট এড়িয়ে চলাচল করতে পারবে। একই সঙ্গে ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী যানবাহন চান্দনা চৌরাস্তার যানজট এড়িয়ে জয়দেবপুরের দিকে যেতে পারবে। তাছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঢাকার দিকেও চলাচলের ক্ষেত্রে এ ফ্লাইওভারের লেন ব্যবহার করা যাবে। ৯টি উড়ালসড়কের কোনোটির একটি আবার কোনোটির দুই দিকেরই লেন খুলে দেওয়া হয়েছে।
[১০] বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক ইলিয়াস শাহ বলেন, ভোগড়াসহ অনেক ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদ সামনে। যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ না হয় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি বিআরটি প্রকল্পের কারণে ঈদে দুর্ভোগ হবে না।
[১১] ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত। তারপরও হঠাৎ করে মানুষ সড়কে নেমে এলে জটলা বা সমস্যা হয়। এ সমস্যা মিনিমাম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছি- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান
[১২] চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে দেশের ব্যস্ততম জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট। মহাসড়কটির উন্নয়নে বিভিন্ন অংশে কাজ চলছে। সড়ক পথে ঢাকা-সিলেটের দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে এখনো। এরই মধ্যে নির্মাণ শুরু হয়েছে নতুন ব্রিজ ও কালভার্ট। এজন্য ঈদে কিছুটা জটলা তৈরি হতে পারে এ সড়কে।
[১৩] প্রকল্পের পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুর করিম বলেন, বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাজ চলমান। এখন ভূমি অধিগ্রহণ ও নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ শতাংশ। তবে ঈদে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ মূল লেনে তেমন একটা সমস্যা হবে না।
[১৪] বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাজ চলমান। এখন ভূমি অধিগ্রহণ ও নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ শতাংশ। তবে ঈদে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ মূল লেনে তেমন একটা সমস্যা হবে না- প্রকল্প পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুর করিম
[১৫] দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ বিদ্যমান সড়কগুলো কমপক্ষে চার লেনে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এডিবির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী এক হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এর আওতায় ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটির উন্নয়ন হচ্ছে।
[১৬] সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্পের আওতায় নির্মিত প্রথম চার লেন মহাসড়ক জয়দেবপুর-এলেঙ্গা। মূল মহাসড়কটি চার লেনের। এর সঙ্গে দুই পাশে ধীরগতি ও স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আরও দুটি লেন তৈরি করা হয়েছে। চার লেনের দুই পাশে গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় মানুষ কিংবা কোনো গবাদিপশু চার লেনের সড়কে প্রবেশ করতে পারে না। মহাসড়কটিতে সাতটি ফ্লাইওভার ও ১১টি আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে।
[১৭] মহাসড়কের পাশে যেসব বাজার রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলোতে সড়ক প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজট লাঘবের পাশাপাশি মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত করেছে। ফলে ঈদে এ সড়কে স্বস্তি থাকবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
[১৮] ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত। তারপরও হঠাৎ করে মানুষ সড়কে নেমে এলে জটলা বা সমস্যা হয়। এ সমস্যা মিনিমাম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছি- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান
[১৯] এছাড়া বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও কোনো সমস্যা নেই। মানুষের সৃষ্ট কোনো সমস্যা তৈরি না হলে এসব রুট থাকবে ঝামেলামুক্ত। ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
২০] সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত। তারপরও হঠাৎ করে মানুষ সড়কে নেমে এলে জটলা বা সমস্যা হয়। এ সমস্যা মিনিমাম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছি।এবার হাইওয়েতে ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে সহায়তা নেওয়া হবে ড্রোনের। ঈদযাত্রা নিয়ে মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছে এ তথ্য।
[২১] ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি। এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত। তারপরও হঠাৎ করে মানুষ সড়কে নেমে এলে জটলা বা সমস্যা হয়। এ সমস্যা মিনিমাম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করছি- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান
[২২] গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এবারের ঈদে সম্ভাব্য কোন কোন এলাকায় জট, যানজট বা ব্লক তৈরি হতে পারে সেটা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এবার হাইওয়েতে ঈদযাত্রায় ড্রোনের সহায়তা নিচ্ছি। ড্রোনের সহায়তায় চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবো।
[২৩] তিনি আরও বলেন, অনেক রাস্তা চার লেন হচ্ছে। কোথাও কোথাও হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় যদি কোনো যানবাহন তাৎক্ষণিক অকেজো হয়ে পড়ে তাহলে সেটি সরানো সহজ হবে। ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহন যাতে ঈদে সড়কে না নামে সেটা নিশ্চিত করতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
[২৪] ঈদযাত্রায় কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ধরনের যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় কেউ পণ্যবাহী যানবাহনে কিংবা অন্য কোনো যানবাহনের ছাদে, খোলা ট্রাক বা পিকআপে উঠতে পারবেন না। আমরা কোনোভাবেই এবার অনিরাপদ ঈদযাত্রা সহ্য করবো না। আমরা এবার হাইওয়ে পুলিশ সড়কে কঠোর থাকবো। যারা অনিরাপদ যানবাহনে যাত্রী উঠাবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[২৫] মঙ্গলবারের ওই মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সারাদেশে ১ হাজার ৫০৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন
হাসপাতালে ভর্তি ৮৮ জন
শাহীন খন্দকার : [১] রাজধানীসহ দেশজুড়েই ২০২৩ সাল ডেঙ্গুর আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য ছিলো। মশা বাহিত এই রোগটি চলতি বছরের শুরুতেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা বিভাগসহ প্রতিটি বিভাগেই ডেঙ্গু রোগের মাত্রাবৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে এক বছরে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী ১ হাজার ৬১৬ ভর্তি ২১ মৃত্যু আর ১ হাজার ৫০৭ চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী। [২] ডেঙ্গু রোগের মৌসুম শুরু হয় সাধারণত গ্রীষ্মকালে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনেই বর্তমানে ডেঙ্গু রোগ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মৃত্যুর হার দেশের ইতিহাসে সকল রের্কড ছারিয়েছে। এদিকে গত দুই হাজার সাল থেকে বাইশ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৮৪৯ জনের।
[৩] গত বছর ২০২৩ দেশের ২৪ বছরের ইতিহাসে ডেঙ্গু সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের ডিসেম্বরে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
[৪] অন্যদিকে ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
[৫] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে আরও জানা গেছে, ২০২২ সালে ২৮১ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে চলতি বছর ২০২৪ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, ১ হাজার ৬১৬ জন। সেই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে চলতি বছরের মার্চ এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যু গত বছরের তুলনায় বেশি। [৬] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস ইনর্চাজ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রেরিত এক তথ্যে আরও জানাগেছে ২২ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটিতে ৪৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে) রয়েছে ৪৩২ জন। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট রোগী ৫৬৪ জন। মারা গেছে ১১ জন, আর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫১০ জন ভর্তি আছে ৪৩ জন। [৭] ঢাকা বিভাগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে তিন জন, খুলনা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ৯৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাহিরে) ৩০ জন। এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে ৩৭ জন, রংপুর সিটির বাহিরে ১৩ জন, সিলেট সিটির বাহিরে ৬ জন। উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা গেছে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশী।
[৮] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইস্রাফিল মিঞা বলেন,চলতি বছর রাজধানী ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব আমরা বেশি পাচ্ছি।উল্লেখ্য চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, চাঁদপুর, জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি। তবে আগাম ব্যাবস্থা নিতে পারলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে আর যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে হয়তো ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে নয় উপজেলা পর্যায়েও এবারে ডেঙ্গু রোগের সম্ভাবনা বেশী রয়েছে।
[৯] তিনি আরও বলেন, সারাদেশেই এখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। এডিস মশা বাড়লে ডেঙ্গু বাড়বে। তাই কোন অবস্থাতেই বৃষ্টি হলে ছোট বড় পাত্রে যে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। আমরা যদি জমে থাকা পানি পরিষ্কার না করি, সেসব জায়গায় এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এডিস মশার প্রজনন বাড়লে ডেঙ্গুও বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি দ্রুত
সমাধান করা হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডাক্তারদের সম্পর্কে আমি ভালো করে জানি। তোমরা বাধ্য হয়েই আসছো। আমি গ্রাম থেকে উঠে আসছি, আমি জানি। সুতরাং যত দ্রুত তোমাদের সমস্যা সমাধান করা যায়, আমি দেখবো।
[২] গতকাল শনিবার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান।
[৩] ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলো দ্রুতই সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আমার কাছে খুব খারাপ লাগলো তোমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছ। আমিও চাই না, আমার কোনো ডাক্তার রাস্তায় নেমে এভাবে আসুক। বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও হাসপাতালের মূল তোমরা। তোমরা যদি ভালো করে কাজ না করো। সব সুনাম-দুর্নাম তোমাদের ওপর। তোমরা ছাড়া আমি উন্নতি করতে পারবো না। আমি তোমাদের দাবি দেখবো।
[৪] এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম আন্দোলনরতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের সময় ভাতা ছিল না। আমরা ভাতা চালু করেছি। স্যার যেহেতু কথা দিয়েছেন, তোমরা এইটুকু আস্থা রাখবে।
[৫] এর আগে ইন্টার্ন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা যৌথভাবে ৪ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের (এফসিপিএস, রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট) বকেয়া ভাতা প্রদান করতে হবে। ১২টি প্রাইভেট ইন্সটিটিউটের নন-রেসিডেন্ট ও রেসিডেন্টদের আকস্মিক ভাতা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ভাতা পুনর্বহাল করতে হবে। অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে।