কল্লোল মোস্তফা
এক্সিম ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্থ পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, পদ্মা ব্যাংকের যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আছে, তার কি হবে?
বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা যার মধ্যে ৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকাই খেলাপি অর্থাৎ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংক কি এই খেলাপি ঋণেরও দায় নিবে? না, নিবে না। বলা হচ্ছে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই খেলাপি ঋণ কিনে নিবে।
প্রশ্ন হলো, এই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পনির মালিকানা কার হবে? কার অর্থে পদ্মা ব্যাংকের এই প্রায় আদায়-অযোগ্য খেলাপি ঋণগুলো কিনে নেয়া হবে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে বণিক বার্তা লিখেছে, সংকটগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংকের যাবতীয় খেলাপি ঋণ সরকার গঠিত একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কিনে নেবে। (এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে পদ্মা ব্যাংক, বণিক বার্তা, ১৫ মার্চ ২০২৪)
এই তথ্য যদি সঠিক হয়, তার অর্থ দাড়াচ্ছে, জনগণের অর্থে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিনে নিয়ে একদিকে ঋণ খেলাপিদের দায়মুক্তি প্রদান অন্যদিকে অধিগ্রহণকারী এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের সুবিধা করে দেয়া।
সরকারি কোম্পানি জনগণের অর্থে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিনে নিলে সেটা আর আদায় করতে পারবে না, যেমন আদায় করতে পারছে না রাষ্ট্রাত্ত ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ।
কাজেই এটা হবে পদ্মা ব্যাংককে পাবলিকের টাকায় দেয়া আরেকটা বেইল আউট সুবিধা। এর আগে ডুবতে থাকা পদ্মা ব্যাংককে বেইল আউট করা হয়েছিলো ২০১৮ সালে- রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৭১৫ কোটি টাকার পুঁজি যোগানের মাধ্যমে।
বিনিময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ডুবন্ত পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পেলেও সেই মালিকানার বিপরীতে এখন পর্যন্ত এক টাকা মুনাফাও পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।
উল্টো ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসান মূলধনের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে। কাজেই রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিনে নেয়ার যদি পায়তারা করা হয়, তাহলে সেটার বিরোধীতা করা জরুরি।
এক্সিম ব্যাংক যদি পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণ করে তাহলে হয় খেলাপি ঋণ সহই অধিগ্রহণ করতে হবে অথবা বেসরকারি মালিকানাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কিনে নিয়ে আদায় করার ব্যবস্থা করতে হবে। লেখক : সর্বজন কথার নির্বাহী সম্পাদক