বাণিজ্যিক উৎপাদনে বেসরকারি খাতের কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র
সোহেল রহমান : [১] চলতি মাসেই পুরোদমে তথা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করেছে বেসরকারি খাতে নির্মিত দেশের তৃতীয় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কক্সবাজারে অবস্থিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। বর্তমানে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৮ বছর মেয়াদে দৈনিক ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। চীনা কোম্পানি এসপিআইসি উলিং পাওয়ার কর্পোরেশন-এর আর্থিক সহায়তায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যৌথভাবে স্থাপন করেছে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বিডি লিমিটেড।
[২] জানা যায়, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-এর উদ্যোগে ২০০৫ সালে ফেনীতে মুহুরী নদীর তীরে বাঁধের কাছে দেশের প্রথম ০.৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
[৩] এর তিন বছর পর কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রই এখন কার্যত বন্ধ বলে জানা যায়।
[৪] বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এবং চালু হওয়ার পর থেকে এটি সুষ্ঠুভাবে চলছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২২টি টারবাইনের মধ্যে ২০টি স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে। প্রতিটি টারবাইনের সক্ষমতা ৩ মেগাওয়াট।
[৫] সূত্র মতে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরে প্রায় ১৪ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট/ঘণ্টা পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। কয়লার ব্যবহার ৪৪ হাজার টন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ১ লাখ ৮ হাজার ৩০০ টন কমাবে এ প্রকল্প। সেসঙ্গে ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে।
[৬] এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে, বাতাসের গুণমান উন্নয়নে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে।
[৭] বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সৌর, জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন কেন্দ্র নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। এর আগে ২০১৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস্য থেকে মোট বিদ্যুতের অন্তত ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
[৮] টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর তৈরি করা ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’-এ বলা হয়েছে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ফ্যাসিলিটি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। নদী তীরবর্তী ও পতিত জমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুতের সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে প্রাক্কললন করা হয়েছে।
[৯] বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে মোট বিদ্যুতের ২ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে কমপক্ষে ১২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।
[১০] বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গায় মোট ১০২ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরও তিনটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরে একটি ৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ফেনীতে একটি ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ঠিকাদার বাছাই পাইপ-লাইনে রয়েছে।
[১১] গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাগেরহাটের মোংলায় একটি ৫৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মোংলা গ্রিন পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
[১২] এছাড়া বাংলাদেশের ৫০০ মেগাওয়াট অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে ডেনমার্কের ১.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সরকারি অনুমোদন পেয়েছে।