এডিবি’র নিজস্ব পর্যালোচনা ক্রয় প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় ৫৯৮ কোটি ডলার ঋণ ছাড় হয়নি এডিবি’র
সোহেল রহমান : [১] উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দাতাগোষ্ঠীর প্রতিশ্রুত ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে অর্থ ছাড় না-হওয়া এবং চুক্তি না-হওয়ার দিক থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিবি’র যথাক্রমে ৫৯৮ কোটি ডলার এবং ৩১৫ কোটি ডলার দিতে পারেনি দাতাসংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
[২] সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে এডিবি’র অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোর এক ত্রি-পক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভায় এডিবি’র উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
[৩] এডিবি বলেছে, সংস্থার সামগ্রিক পোর্টফোলিও’র বেশিরভাগ প্রকল্পের বিশেষত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো প্রকৃত বাস্তবায়নের সময়কালের মধ্যে ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না বা সেগুলো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বল প্রস্তুতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্রয় প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহবানে বিলম্ব।
[৪] এডিবি’র হিসাবে, চলতি ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেয়া মোট প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে ছাড় না-হওয়া ঋণের স্থিতি বেড়ে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। গত ২০২২ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত এটি ছিল ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৪৭৯ কোটি ডলার।
[৫] ঋণ ছাড়ের হিসাবে, এডিবির মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ছাড় করাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো তাদের মোট ঋণ প্রতিশ্রুতির মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশই ছাড় করাতে পেরেছে।
[৬] একইভাবে ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট অর্থায়নের পোর্টফলিও’র মধ্যে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশের ক্রয়চুক্তি হয়নি। কারণ গত এক বছরে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো দরপত্র প্রক্রিয়ায় সামান্যই অগ্রগতি করেছে।
[৭] এর আগে ২০২২ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তিহীন ঋণের স্থিতি ছিল মোট পোর্টফোলিও’র ২০ শতাংশ বা ২৩৩ কোটি ডলার।
[৮] এডিবি বলেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম দুই বছরে, বাংলাদেশে সংস্থাটির সামগ্রিক ঋণের মাত্র ১৩ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি হয়েছে। অবকাঠামো খাত তাঁদের ঋণের মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
[৯] অন্যদিকে বেশিরভাগ প্রকল্পেরই বাস্তবায়ন শুরুর চার বছর পরে প্রকল্পের ক্রয়চুক্তির মাত্র ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো তাদের মোট ঋণের মাত্র ২৯ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ঋণ ছাড়ের হিসাবে, মোট ঋণের মাত্র ২২ শতাংশ ছাড় হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম চার বছরে অবকাঠামো খাত তাদের মোট ঋণ প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ছাড় করাতে পেরেছে।
[১০] এডিবি বলেছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবি’র অর্থায়নের পোর্টফলিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ছয়টি খাতের ৫৬টি প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবি’র বাংলাদেশ পোর্টফোলিও-তে।
[১১] এসব খাতের মধ্যে কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ ও গ্রামীণ উন্নয়নের ৮টি প্রকল্প রয়েছে; মানব ও সামাজিক উন্নয়নের রয়েছে ১০টি প্রকল্প; জ্বালানির ৯টি প্রকল্প, পরিববনে ১১টি প্রকল্প, পানি ও নগর উন্নয়নে ১১টি প্রকল্প এবং অর্থায়ন, সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের প্রকল্প আছে ৭টি।
[১২] জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থায়ন হচ্ছে মোট পোর্টফলিও’র ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ।
[১৩] এছাড়া ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারিগরি সহায়তার চলমান ৩৭ প্রকল্পের আর্থিকমূল্য হচ্ছে ৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।