ভোক্তাদের অধিকার, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বোতলজাত গ্যাস বিস্ফোরণ
রবিউল আলম
নিত্যপণ্যের তালিকায় জ্বালানিকে বাদ রেখে অধিকার পূরণ হবে না। আমাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকারের দায়িত্ব সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অভিহিত নই। টিভিতে ভেজালবিরোধী ও নকল পণ্য প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান দেখতে ভালো লাগে। একটি যোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম ভোক্তা অধিকার। মহাপরিচালক একজন দেশপ্রেমিক, সৎ মুক্তিযোদ্ধা সফিকুজ্জামান। দেশ ও জাতির স্বার্থকে রক্ষার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি সঠিক তথ্যের অভাবে। ভোক্তা অধিকার যেভাবে সাধারণ ব্যবসায়ী ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, দেশ জাতির স্বার্থ বিবেচনা করে। প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্সি গুলো যদি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারতো, বুঝিয়ে দেওয়া হতো নিজ নিজে প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সির কী করতে হবে, তবে এতোগুলো অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হতো না। একাধিক হোটেল রেস্টুরেন্টের অগ্নিকাণ্ডের জন্য গ্যাসের বোতলকে চিহ্নিত করা হয়েছে, অনেকাংশে। গ্যাসের বোতলে অনেক কোম্পানির নাম ঠিকানা নেই, গ্যাসের ওজন নিয়ে গ্রাহকের অনেক প্রশ্ন আছে, তারপরেও বিক্রিতে বাধা নেই। অগ্নিকাণ্ডের পরে হোটেল মালিক ভবন মালিক কর্মচারীদের আইনের অধিনে আনা হচ্ছে, অথচ যে গ্যাস কোম্পানির বোতল লিকেজে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, সে কোম্পানির নামটা পর্যন্ত উচ্চারণ করার সুযোগ নেই মিডিয়ার। বিচারের আওতায় আনা তো পরের প্রশ্ন! ভেজালবিরোধী অভিযানে ভোক্তা অধিকারকে গ্যাস, গরুর হাট, পেট্রোল পাম্প, মানুষের জীবনে নিত্যপণ্যকে ভোক্তা অধিকারের আওতায় আনা জরুরি।
না হয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মতো ২৯ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে পারে। কৃষি বিপণনকে নিত্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বকে দিয়েছে? আমরা জানি না। ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০১৮ থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য মূল্য নির্ধারণ অস্বীকার করেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেয়নি। কোনো প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ২৯ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করলেন? এবং বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব কোনো প্রশাসনের কাদে ঝুলিয়েছেন? অযোগ্য প্রশাসনে নেতৃত্ব জাতির জন্য ভয়ঙ্কর। এখন এক রাতে মাংসের দাম ৬৯৫ টাকা হয়ে গেছে, দায় কে নেবেন? ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল জব্বার সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণের সভাতে, আপনি ৫ টাকার আলুর দাম বেশির জন্য ক্যামেরার সামনে জবাবদিহিতায় আনেন একজন ফেরিওয়ালা কে, গরুর হাটের ইজারাদার সিডিউলের স্বার্থ ভঙ্গ করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ চাঁদাবাজি করছে, জবাবদিহিতায় আনতে পারছেন না কেনো? কোনো জবাব তিনি দেননি। আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ভোক্তা অধিকারের ক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধ আছে। হোটেল রেস্টুরেন্টের মালিক কর্মচারীদের মতো গ্যাসের বোতলের মালিক কোম্পানিদের জবাবদিহিতার জন্য ভোক্তা অধিকারকে হয়তো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সরকার কি তাদের কাছে জিম্মি? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমেরিকার জন্য ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, একজন ড. ইউনূসকে জবাবদিহিতায় আনার জন্য, বাংলাদেশে বিচারহীনতা দূর করার জন্য।
গ্যাসের ব্যবসায়ীরা জবাবদিহির বাইরে থাকতে পারে কীভাবে? ভোক্তা অধিকারের চেয়ে জবাবদিহিতার কাজটি আর কোনো প্রশাসন ভালো করতে পারবে না। সব দোষ হোটেলের হতে পারে না। দোষীদের জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে, সরকারের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য। ইচ্ছেমতো আইন যাতে প্রয়োগ করতে না পারে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিমের মতো। আইন প্রয়োগের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। গ্যাসের বোতল বিস্ফোরণ হয়ে একাধিক পরিবারের, একাধিক ব্যক্তি অগ্নিকাণ্ডের শিকার, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে উপচে পরেছে। একটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে আইনের অধীনে আনা হয়নি। গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানায় সরকারি গ্যাস অবৈধ জ্বলছে। সরকারের বেধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে গ্রাহককে অনেক বেশি দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়। প্রশাসনের নীরবতায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, উত্তর পাওয়া কঠিন। সরকার আর প্রশাসনের লুকোচুরি না করে, অবৈধ গ্যাসের বৈধতা দিলে একটি পদ্মা সেতুর টাকা উঠে আসবে। শহর কেন্দ্রীক অগ্নিকাণ্ড কমে আসবে। কে কার কথা শুনবে? কারা এ নাগরিক অধিকারে, সরকারের অর্থ আয়ের বাধা? খুঁজে বের করতে হবে। বঙ্গপোসাগর গ্যাসে ভাসছে, ভোলা সিলেটে উপচে পরছে, জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সংযোগের অপেক্ষায় জাতি। শেখ হাসিনা সরকারের শত সফলতাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করার জন্য কিছু লোক থাকে। সরকারে লুকিয়ে থাকা কিছু গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকারা নয়তো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই যদি সব দায়িত্ব নিতে হয়, তবে সরকারে এতো মন্ত্রী, এতো আমলার প্রয়োজন কেন হয়? সবাই ব্যর্থ হতে পারে না। ভোক্তা অধিকারকে শুধু আলু, পেঁয়াজ, মাংসে সীমাবদ্ধ না রেখে, ভোক্তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ভোক্তার অধিকার রক্ষা করতে হবে।
না হলে ভোক্তার অধিকারের নামটাই বিফল হতে পারে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে। কোনো পণ্য ও বস্তু ভোক্তার অধিকারের বাইরে নয়। আমি বিক্রেতা, আমিই ভোক্তা। জনজীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুতে ভোক্তাদের অধিকার আছে। ন্যায্যমূল্যে নির্ভেজাল পণ্য জাতি জন্য সরবরাহ করার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকারকে দেওয়া হয়েছে। গ্যাসের বোতল কোম্পানিকে আলাদা অবস্থানে রাখা যাবে না, গ্যাসের বোতল ভেজালবিরোধী অভিযানে আনতে হবে। লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি