রোজাদারদের জন্য অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছেন পিরোজপুরের রিকশাচালক ইউসুফ
পিরোজপুর প্রতিনিধি : [১] পিরোজপুরে মো. ইউসুফ (৪৫) নামে এক রিকশাচালক রমজান উপলক্ষে রোজাদারদের থেকে হাফ ভাড়া নিচ্ছেন। তার রিকশার পেছনে লেখা রয়েছে -পবিত্র রমজান উপলক্ষে রোজাদার যাত্রীদের জন্য ১০ রমজান পর্যন্ত হাফ ভাড়া নেওয়া হয়।জানা গেছে, এই উদ্যোগকে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ২০ রমজান পর্যন্ত করেছেন ওই রিকশাচালক।একজন রিকশাচালকের এমন উদ্যোগ শহরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
[২] জানা গেছে, গত প্রায় তিন দশক ধরে পিরোজপুর শহরে রিকশা চালান মো. ইউসুফ (৪৫)। তার বাড়ি পিরোজপুর পৌরসভার রায়েরকাঠি গ্রামে। তিনি এক ছেলে ও এক কন্যার বাবা। ছেলে ঢাকায় থাকেন আর মেয়েকের বিয়ে দিয়েছেন।
[৩] এমন উদ্যোগের বিষয়ে রিকশাচালক ইউসুফ বলেন, রোজা উপলক্ষে ১০ রমজান পর্যন্ত রোজাদারদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার একটি লেখা রিকশার পেছনে লিখি। এরপর লেখাটি স্থানীয়দের অনেকের নজরে আসে। টাকা কম পেলেও যাত্রীদের এমন সেবা দিয়ে আমি তৃপ্ত।যে কারণে ২০ রমজান পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মো. ইউসুফ।
[৪] এরপর মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকায় রিকশা চালাতে পারবেন না। তাই আগামী বছর বেঁচে থাকলে রমজানের পুরো মাস অর্ধেক ভাড়ায় রিকশা চালাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইউসুফ। [৫] কোন ভাবনা থেকে এমন পরিকল্পনা এলো মাথায় জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, রমজান মাসে পৃথিবীর অনেক দেশে পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। এটা জেনেই এমন সিদ্ধান্ত নিই। [৬] মূলত এখন সবার কাছ থেকেই অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছেন ইউসুফ। বললেন, এখন সবার কাছ থেকেই এখন অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছি। কে রোজাদার আর কে রোজা রাখেনি, তা জিজ্ঞাসা করলে যে যাত্রী রোজা রাখেনি তিনি নিজেকে লজ্জিত অনুভাব করতে পারেন। তাই সেই প্রশ্ন করি না।
[৭] তিনি জানান, রোজার আগে নিয়মিত রিকশা চালিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতেন। কিন্তু রোজা উপলক্ষে ভাড়ায় এমন ছাড় দেওয়ায় তার দৈনিক আয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে তিনি রিকশা চালানো মাঝে বসে থেকে বিশ্রাম নিতে পারতেন। এখন বিশ্রাম নেওয়ার সময় নাই। একমাত্র ইফতার উপলক্ষে আর ঘুমানো সময়টিই বিশ্রাম হয়।
[৮] ইউসুফের রিকশায় ওঠা একাধিক যাত্রী বলেন, রিকশা থেকে নামার পর তাকে নির্ধারিত ভাড়া দিলেও তিনি নিজের থেকেই অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছেন। তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছেন।
[৯] পিরোজপুর পৌর শহরের মধ্য রাস্তার নিবাসী মো. মিরাজ কাজী বলেন, শনিবার বিকালে শহরের দামুদর ব্রিজের কাছ থেকে ওই চালকের রিকশায় উঠি। নিয়মিত ভাড়া ২০ টাকা। তাই বাসার সামনে নেমে তাকে একটি ২০ টাকার নোট দিই। তিনি আমাকে ১০ টাকা ফেরত দেন। পরে কারণ জানতে চাইলে তিনি রিকশার পেছনের লেখাটি পড়তে বলেন।
[১০] উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি ও শহরের জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মী খালিদ আবু বলেন, রমজান উপলক্ষে সারা দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। আর একজন রিকশাচালকের রমজান উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিচ্ছেন। তার এ উদ্যোগ ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ বলে মনে করি। তার এমন কাজ অনুকরণীয়। ইউসুফ শিক্ষার্থী ও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকেও কম ভাড়া নেন বলেও জানান খালিদ আবু।