এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, পিছিয়ে দেওয়ার সাধ্য কারও নেই
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পেছনে দেশের মানুষ যেমন কাজ করছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেশকে স্থিতিশীল রেখেছেন। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছেন। বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলছেন। এর ফলে আমরা এগিয়ে যেতে পারছি। কাজ পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশকে নিয়ে নানান লড়াই-সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম দেশকে পাকিস্তানি ধারা থেকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় আনার লড়াই শুরু করেন দেশে ফেরার পর থেকেই। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর দীর্ঘ একুশ বছর পর বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার শুরু করেন। স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া শেষে ঘাতকদের বিচার সম্পন্ন হয়। অনেকের সাজা কার্যকর করা হয়। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে থাকায় এখনো কার্যকর করা যায়নি। তবে শেখ হাসিনার বড় সাফল্য হচ্ছে একাত্তরের ঘাতকদের সহযোগী আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের বিচার করা। মানবাধিকার বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার করে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার প্রয়াসটি তিনিই শুরু করেন এবং বিচারের রায় কার্যকরও করেন। যদিও এখনো একাত্তরের ঘাতকদের বিচার হচ্ছে, যারা এখনো বিচারের বাইরে আছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। শেখ হাসিনা ছাড়া আর কে পারতেন এমন দুঃসাহস দেখাতে? একাত্তরের ঘাতকেরা অর্থবিত্তে এমন শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো যে তাদের পাপের সাজা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ ও দুঃসাধ্য ছিলো। বিএনপি তাদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছিলো। যদিও বাংলার মানুষের বিপুল সাড়া এই বিচার করতে সাহস যুগিয়েছিলো শেখ হাসিনা সরকারকে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ শেখ হাসিনা সরকারের আরেক অনন্য অর্জন। বিশ^ব্যাংকসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা চক্র যখন ষড়যন্ত্র করে এই সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, তখন এ দেশের মানুষ তা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। যেখানে অর্থই ছাড় দেয়নি, সেখানে দুর্নীতির ঠুনকো অভিযোগে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ^ব্যাংসহ দাতা দেশগুলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্ত যখন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে তখন কি আর কোনো ষড়যন্ত্র আর ঠুনকে অভিযোগ স্বপ্নের পদ্ম সেতু নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? পারে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষণা দিলেন নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। জনগণ আপন ইচ্ছায় পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ দিতে এগিয়ে আসে। জনগণের এই জেগে ওঠা এবং আপন শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার কারণেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা গেছে। এই অর্জন বিশে^র কাছে বাংলাদেশকে অন্য মর্যাদা দেয়।
মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। পাকিস্তানিরা বারবার আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছিলো। আমরা ন্যায্য দাবি আদায়ে গণতান্ত্রিক পথে বারবার এগিয়ে গেছি। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা আমলে নিতো না। নিতে চাইতো না। এর ফলে অনিবার্য হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। আমরা লড়াই করে অধিকার ফিরিেেয় এনেছি। পৃথিবীতে অনেক জাতির নাগরিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। লড়াই-সংগ্রাম করছে। একবিংশ শব্দীতে এসেও রোহিঙ্গারা তাদের দেশছাড়া। গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশমুখী হয়েছিলো। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছিলো। এগারো লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। বিশে^র কোনো দেশ যখন তাদের আশ্রয় দিতে নিরুৎসাহ দেখাচ্ছিলো তখন বাংলাদেশ তথা রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনা তাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সহজ ছিলো কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া? না। কারণ সতের কোটি মানুষের চাপে বাংলাদেশ এমনিতেই নানা সংকট আছে। তা সামলানো সহজ নয়। তবুও শত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশে^ বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়। মানবিক রাষ্ট্র তার মানবিকতা সর্বোচ্চ প্রদর্শন করে। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীরা যখন বলেন, আমরা সুইজারল্যান্ড হতে চাই না, ১০ বছরের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও, তাতে বোঝা যায় এখনকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির গভীরতা। বাংলাদেশ এখন অর্থনীতিতে এশিয়ান টাইগার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বিশ^ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাংলাদেশ বন্দনায় মেতে থাকে। বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে টানে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। যদিও করোনা মহামারি ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও কিছুটা চাপে আছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই অর্থনৈতিক চাপ দূর হয়ে যাবে।
অবকাঠামো ক্ষেত্রে অভাবনীয় কাজ হচ্ছে। চার লেন রাস্তা তৈরি, বড় বড় শহরগুলোতে ফ্লাইওভার নির্মাণ, ঢাকায় মেট্টোরেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল কি আমাদের উন্নয়নের জন্য বড় ব্যাপার নয়? প্রতিটি ক্ষেত্রেই আসলে এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিশু-মাতৃ মৃত্যুহার কমে আসা অভাবনীয় উন্নতি হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকছি না। শিল্পকলকারখানা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। আমরা প্রযুক্তিতেও এগিয়ে যাচ্ছি। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তি করছে। যা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে শক্ত পিলার হিসেবেই কাজ করবে।
আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাস করছি। স্বপ্ন এখন স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ। অথচ ২০০৯ সালের আগে দেশ ছিলো এনালগ। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ইশতিহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলো। অনেকে হেসেছিলো এসব কথা শুনে। কিন্তু অসম্ভব, কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে দিন বদল করেছেন বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। প্রযুক্তি খাত এখন আমাদের জন্য বিরাট সম্ভাবনাময়। লাখো তরুণ প্রযুক্তি সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ঘরে অফিস করছে। বিশে^র সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কাজ করছেন আমাদের তরুণেরা।
গৃহহীন মানুষদের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ শেখ হাসিনার একটি অসাধারণ কাজ। সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীন লাখ লাখ মানুষকে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। লাখ লাখ মানুষের জন্য বিনামূল্যে জমি ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নজির দ্বিতীয় আরেকটি আছে কি পৃথিবীতে? বিপুল সংখ্যক মানুষ বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’Ñপ্রকল্প ছিলো শেখ হাসিনার আরেকটি উদ্ভাবনী চিন্তার নজির। এমন অসাধারণ চিন্তা ও মানসিকতা কেবল বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষে সম্ভব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে লাখো মানুষ উপকৃত হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে এই প্রকল্পের উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। যদিও অনিয়ম-দুর্নীতির খবর মাঝেমধ্যে পেয়ে থাকি, সীমাবদ্ধতা ও অনিয়ম দূর করতে পারলে এসব প্রকল্পের সুফল জনগণ পাবে অনেক বেশি।
কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করেছিলেন। এটি অনন্য প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছে। সাধারণ মানুষের প্রতি দরদ তাঁর প্রতিটি কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়। যদিও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বন্ধ করেছিলো। ভাবা যায়!
পরিচিতি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসক এবং ইমিরিটাস অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ