বাংলাদেশের উন্নয়নে একজন সাহসী নারী, সাহসী প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ভূমিকা
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
আমি রাজনীতির মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে এখনো সক্রিয় আছি। বর্তমানে আমার রাজনৈতিক দল ভেন্সতার পার্টির স্টকহোম ডিসট্রিক্ট কমিটির ইলেকটেড মেম্বার ও স্টকহোম নর্থ জেলখানা কমিটির একজন ইলেকটেড মেম্বার। অনেক আগেই দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ এসেছিলো। তখন যখন রাজনীতিতে আসিনি, এখন এই বয়সে আসার চিন্তা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন আমার চিন্তাধারা থেকে অনেক দূরে। আমি সুইডেনে কোনো বাংলাদেশি রাজনীতি করি না। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশি রাজনীতি করার ইচ্ছা আমার নেই। তবে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য দূর দেশ থেকে যতোটুকু পারি কাজ করে যাবো। বাংলাদেশিরা দূর দেশে যখন কোনো উচ্চ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন, তখন নিশ্চয়ই সেটা বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও আনন্দের। এতে তো বাংলাদেশই ব্র্যান্ডিং হয়। বাংলাদেশের সুনাম বাড়ে। আমি সুইডিশ লেফট পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে ২০০৮ থেকে সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্টে নির্বাচিত বিচারকের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া আট বৎসর স্টকহল্ম ইমিগ্রেশন কোর্টে নির্বাচিত বিচারক ছিলাম। ২০২৪ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত আপিল কোর্টে পুনরায় নির্বাচিত বিচারক হিসেবে মনোনীত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি। আমি এখন সিভিয়া (স্টকহোম) আপিল কোর্ট নির্বাচিত বিচারক সমিতির নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট।
দেখুন আমি কোনো পেশাদার আইন বিশেষজ্ঞ নই। তবে দীর্ঘদিন আপিল কোর্ট ও ইমিগ্রেশন কোর্টে নির্বাচিত বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা দিয়ে চেষ্টা করি বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া। বিশেষ করে আমি আমার সাধ্যমতো বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইমিগ্রান্টদের নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকি। যাতে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। যখন কেউ আমার কাছে আসে, যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা করি। ভবিষ্যতেও সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমাকে ভোট না দিলেও দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য আমার দরজা খোলা। করোনা মহামারি বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল করে দিয়েছিলো। ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বও এর বাইরে ছিলো না। খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করে সুইডেনসহ ইউরোপের দেশগুলো। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সুইডেন এই সময় লকডাউন না দেওয়াতে খুব সহজেই এই ক্রাইসেস মোকাবেলা করলেও পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি ইসরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র আক্রমণ নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তবুও বলবো, প্রথমদিকে ইউরোপের অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা ছিলো সেটা এখন অনেকটা কমে এসেছে। দেশগুলোর অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। প্রত্যেক দেশই তার নিজস্ব পলিসিতে এগোচ্ছে। নিজেদের নাগরিকদের উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠছে বলেই আমার মনে হয়।
ইউরোপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইমিগ্রান্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন সামনে এগিয়ে আসছে। কিছু কিছু দেশে এখন তারা ক্ষমতায়। সুইডেনের ইমিগ্রান্ট বিরোধী চরম ডানপন্থ’ী রাজনৈতিক দল সুইডেন ডেমোক্রেটের সমর্থন নিয়ে বর্তমানে রক্ষণশীল দল মডারেট, কৃষ্ট ডেমোক্রেট ও লিবারেল জোট ক্ষমতায়। একসময় সুইডেনে ইমিগ্রান্ট বান্ধব রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত লিবারেল পার্টিও এখন পাস করছে বহিরাগত বিরোধী নানা আইন। ইউরোপের সব দেশের মতোই সুইডেনও এখন ইউরোপের বাহির থেকে আসা বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন নতুন আইন পাস করছে। তবুও এখনো ইউরোপে বৈধ উপায়ে আসার পথ উন্মুক্ত রয়েছে। বৈধ উপায়ে বর্তমানে দুই ভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে আসা যায়। একটি হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, অপরটি চাকরি নিয়ে আসা। দক্ষ কর্মীরা এখন চাকরি নিয়ে সহজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আসতে পারেন। স্টুডেন্টরাও আসতে পারেন। ফলে আমার পরামর্শ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা দক্ষ, তারা ইউরোপের দেশগুলোর ওয়েবসাইট ফলো করে চাকরির আবেদন করে চাকরি নিয়েই আসতে পারেন। সুইডেন এখন দক্ষ শ্রমিকদের তার দেশে দ্রুত ভিসা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য তাদের মাইগ্রেশন বোর্ডে পৃথক বিভাগ করেছে। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর দক্ষ লোক সুইডেন আসছে। স্টুডেন্টদের পড়াশোনা শেষ করার পর সুইডেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত এক বৎসর সময় বেঁধে দেয়। এই সময় কাজ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া হয়।
নিত্যপণ্যের দাম আসলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের পার্থক্য হলো সেখানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি সরকার বেতনভাতাও সমান হারে বাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে বড় বড় পাইকারী কোম্পানিদের ডেকে তাদের ট্যাক্স অস্থায়ীভাবে হ্রাস করে। ফলে পণ্যের দাম বেশি হলেও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। যাদের আয় কম তাদের সামাজিক ভাতার মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। তাদের খুব একটা উদ্বিগ্ন হতে হয় না। এ কারণেই এসব দেশকে বলা হয়, কল্যাণ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের নাগরিকদের পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতনভাতা বাড়ে না। বড় বড় পাইকারীদের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রিত। সরকারের নির্দেশ তারা মানে না। সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা যখন তখন মূল্য বৃদ্ধি করে। ফলে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারদের জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া ক্রাইসিসের সময় বাংলাদেশে অতিরিক্ত সামাজিক ভাতা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যে কারণে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বাড়লে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। তারা জীবন নির্বাহ করা নিয়ে ব্যাপকভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। যেটা ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের বেলায় ততোটা হয় না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বেতন ভাতা ও সামাজিক ভাতা সমান হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্যের নেতিবাচক প্রভাব ততোটা পরে না। বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো আইন আছে, তবে তার যথাযথ প্রয়োগ নেই।
বিদেশিরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চমৎকৃত। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে তারা প্রশংসা করে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। জন্মসূত্রে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে এটাকে আমরা গর্ব হিসেবে নিই। ইউরোপের লোকজনও বাংলাদেশের এই উন্নয়নের খোঁজখবর রাখে। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে তারা প্রশংসা করেন। আগ্রহ দেখান। অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স এই উন্নয়নে এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের এই সার্বিক উন্নয়নে একজন সাহসী নারী, সাহসী প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ভূমিকা অনন্য। তার সাহসী নেতৃত্ব ও সব সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারীবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন বিশ্বে পরিচিত। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সরকারকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার তাহলো বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সচেতন, সতর্ক বা ঝুঁকির ব্যাপারটি বিশেষভাবে দেখা প্রয়োজন বলেই আমি মনে করি।
পরিচিতি : নির্বাচিত বিচারক সিভিয়া (স্টকহোম),
আপিল কোর্ট