চীন ফান্ডিং’র বিকল্প হিসাবে বিশ্বব্যংক ও আইএমএফ-কে চ্যালেঞ্জ করছে
ওয়াসি মাহীন
এস্তোনিয়ান পিএম কালাস ইইউসিও’র মিটের আগে বলেছেন ইউরোপের ডিফেন্সে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। এর পাশাপাশি তার এক বক্তব্যে এসেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়াতে রাশিয়ার পরাজয় জরুরি।
একজন চীনা জিও পলিটিক্যাল এনালিস্ট দেখলাম এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলছেন “ঊঁৎড়ঢ়ব হববফং ধ ঃযরৎফ ডড়ৎষফ ডধৎ ঃড় ফবভবধঃ জঁংংরধ রহ ড়ৎফবৎ ঃড় ধাড়রফ ধ ঃযরৎফ ডড়ৎষফ ডধৎ?
গাজায় সিজ ফায়ার সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আনীত রেজলুশনে এবার ভেটো প্রয়োগ করেছে চীন ও রাশিয়া। বিলে আলজেরিয়া বিপক্ষে ভোট দেয়। সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্থায়ী মেম্বার না হওয়ায় সেটি ভেটো হিসাবে গণ্য হবেনা।
আমেরিকার এই বিলটি উত্থাপন করে মূলত বন্দী বিনিময়ের শর্তে। চীন রাশিয়ার বক্তব্য এটা কার্যকরী অস্ত্রবিরতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এর আগের সিজ ফায়ার রেজলুশনগুলিতে আমেরিকা ভেটো দিয়েছে। মূলত এখানেও এখন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চলছে। এটাকে কি কোল্ড ওয়ার বলা যায় কিনা জানিনা তবে ইন টার্মস অব স্কেল এটা সোভিয়েত রাইভালরির থেকে কোন অংশে কম নয়।
এদিকে আমেরিকা চীনের হুয়াওয়ে যেন কোন অবস্থাতেই বিকল্প কোন ভাবে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের সুযোগ না পাই সেজন্য সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি পদে তারা নিষেধাজ্ঞার ঝুরি নিয়ে হাজির হবার কথা ভাবছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় এই যাত্রায় মনে হয়না ফিলিস্তিনের সমাধানে কেউ কার্যকরী প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে। তবে এর রেশ থাকবে বেশ। ইজরাইল সফল। ফিলিস্তিনে ইতোমধ্যে ৩২ হাজার প্রাণ নেই। গাজার রিফুজি ক্যাম্পগুলিও এখন টার্গেট। নির্বিচারে মানব ধ্বংসলীলা চলছে।
সংঘাতের শুরুতে যেই আশঙ্কা করেছিলাম, এত দিন পর এসে মনে হয় সেটাই হতে চলেছে। ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র ইউনিপোলার শক্তির বিপরীতে মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড অর্ডার। এক্ষেত্রে একক আধিপত্যের অবসান ছাড়া কার্যকরী কোন পদক্ষেপ আমরা দেখব না। প্রতিটি পদক্ষেপ হবে হটকারী এবং আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্টারেস্টকে প্রশ্নের উর্ধে রেখে। এক্ষেত্রে ন্যায্যতা, ডেমোক্রেসি, মানবিকতা এগুলো শুধুমাত্র পলিটিকাল রেটরিক।
তবে একটা সমস্যা দেখছি সামনে। আসন্ন ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজন রাশিয়া। এই বছরেই পুতিন আরো ৬ বছর মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা পোক্ত করেছে। এদিকে চীনেও শি জিন পিং একচ্ছত্র ক্ষমতা উপভোগ করছেন। এই দুজনের বিপরীতে বাইডেন সম্ভবত আমেরিকাকে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে হিমশিম খাবেন। আগামী নির্বাচনে ট্রাম্প আসলেও এই দুজনের সাথে আপোষ ছাড়া সংঘাতে যাবার সাহস করবেন বলে মনে হয়না। পুতিন ও শি উভয়েই বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানে সবথেকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে অভিজ্ঞ। সেই হিসাবে আগামী ৬ বছরে বিশ্বশাসনে বড় পরিবর্তন না আসলেও একক ক্ষমতাধর হিসাবে আমেরিকার অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করবার মত সুযোগ তৈরি হতে থাকবে। তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান করা যায়, মস্কোর কনসার্টে হামলা করে শতাধিক মানুষ হত্যা ও আইএস’র দায় স্বীকার করাটা আসলে কার চাল সেটা পুতিনের মত নেতার না বুঝার কিছু নেই। রাশিয়ায় চেচেনরা বেশ বড় সহযোগিতা করছে পুতিনের যা কারো অজানা নয়। এই হামলায় রুশদের কাছে আইএস এর নামে কেবলমাত্র পুতিনকে ভিলেন বানানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়ে থাকতে পারে।
আফ্রিকায় রুশ ও চীনা প্রভাব আমেরিকা পছন্দ করছে না। বলতে গেলে আফ্রিকা পশ্চিমা প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে আসছে চীন ও রাশিয়ার হাত ধরে। এক্ষেত্রে চীন ফান্ডিং এর বিকল্প হিসাবে বিশ্ব ব্যংক ও আইএমএফ-কে চ্যালেঞ্জ করছে। অন্যদিকে ব্রিকস নিয়ে রাশিয়ার অতি আগ্রহে সামিল হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলি। সম্প্রতি নাইজার আমেরিকার সাথে সিকিউরিটি প্যাক্ট নবায়নে না করে দিয়েছে। ব্রিকস এর রাশিয়া সম্মেলনে ৩৬ দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহী এবং এর ভেতর আফ্রিকার দেশগুলোর সংখ্যা যথেষ্ট। হতে পারে আগামীতে বিশ্ব শুধু ইউরোপ আমেরিকার নেতৃত্বে চলবে না। সেখানে যোগ্য অবস্থান নিবে এশিয়া ও আফ্রিকা। লেখক : ব্যাংকার।