বাজার ব্যবস্থাপনা কি ভারতের উপর নির্ভরশীল!
মাসুদ কামাল
ভারতীয় পণ্য বর্জন করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের এবার মুখ খুলেছেন। তিনি সরাসরি আক্রমণ করেছেন বিএনপির নেতা রুহুল কবীর রিজভীকে। আওয়ামী লীগের কমপক্ষে চারজন নেতারাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে হাস্যকর বলে মনে মন্তব্য করছেন এবং আন্দোলনে বিএনপির যোগ দেওয়া হঠকারিতা সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। শুক্রবার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দুপুরে ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আন্দোলনের ইস্যু না থাকায় বিএনপি ভারত বিরোধিতাকেই ইস্যু বানায়। ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে বিএনপি দেশের বাজার ব্যবস্থাকে অস্থির করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আপত্তির বিষয় হলো দেশের বাজার ব্যবস্থা কি ভারতের উপর নির্ভরশীল? কেউ ভারতীয় পণ্য বয়কট করতেই পারে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে কেউ ভারতীয় পণ্য বয়কট করতেই পারে প্রচারণা চালাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন করতেই পারে, যে কোনো অ্যাক্টিভিস্ট করতে পারে কোনো পলিটিক্যাল পার্টি তা প্রচার করতেই পারে তাই বলে আওয়ামী লীগ দাবি করছে এর ফলে নাকি বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা অস্থির হবে। তার মানে কি আমাদের বাজার ব্যাবস্থা ভারতের উপর নির্ভরশীল? বাজার ব্যবস্থাপনা বড় কথা নয়, আমার যখন প্রয়োজন হবে তখন আমি আমার সুবিধামতো দেশ থেকে কিনে আনতে পারবো।
রুহুল কবীর রিজভী তার ভারতীয় শাল পুরে ভারতী পণ্যকে বয়কট জানিয়েছেন। এটাকে পাগলামি বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ভারত বয়কট নিয়ে একটা স্পেশাল রির্পোট করেছে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বক্তব্য ও মতামত নিয়ে। আমি কালের কণ্ঠের রির্পোট থেকে তাদের বক্তব্য থেকে বলছি। কাজী জাফরুল বলেছেন, তারা এখন চাদর পোড়াচ্ছে, অথচ যখন ভারত থেকে চাল, ডাল নিয়ে আসি তখন তো কেউ কিছু বলে না। যারা রাজনৈতিক কারণে এখন এসব করছে সেই রিজভী সাহেবেরাই তো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সবার আগে দৌঁড়ে ভারত যান। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ভারত বিরোধিতার নামে তারা এখন যে সস্তা রাজনৈতিক ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, তা মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন বলেছেন, এসব কর্মসূচি পুরোটাই হঠকারিতা। এটা রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। বিএনপি বরাবরই এটা করে এসেছে। এসব সূক্ষ্ম রাজনীতি করতে গিয়েই বিএনপি বরাবর জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, এই কর্মসূচি একান্তই বিএনপির নিজের। এর সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা মাঠ গরম করার জন্য ইস্যুর অবতারণা মাত্র।
আমি বক্তব্যগুলো থেকে কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে চাই। যেমন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, এই কর্মসূচি একান্তই বিএনপির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। আসলেই কি তাই? জনগণের সম্পর্ক আছে কী নেই এটা প্রমাণ করার জন্য এখন বিএনপি কাজ করবে। বিএনপিকে যদি জনগণ সাড়া না দেয়, তবে বুঝতে হবে বিএনপি একটা জনবিচ্ছিন্ন দল। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ভারত বয়কট করার ঘোষণা বিএনপি বা রিজভী দেননি, এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিয়েছিলেন। যার ফলে এতো মানুষের সাড়া পাচ্ছে হয়তো সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে গেছে বলেই এতো সাড়া পাচ্ছে। আন্দোলনের যথার্থতা বুঝার চেষ্টা না করে আন্দোলনের চাওয়া পাওয়া না বুঝে কে বললো, কীভাবে বললো, রাজনীতি করলো না কি করলো সেটা চিন্তার বিষয় না। মানুষ কী ভাবছে সেটা চিন্তা করে দেখেন।
একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট যিনি দেশের বাইরে থেকে ভারত বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন যে ক্ষমতাবান না রাজনীতি করে না তাহলে উনার আহ্বানে এতো মানুষ সাড়া দিয়েছে যার ফলেই বিএনপি এ সেন্টিম্যান্টকে ধারণ করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বিষয়টাকে যতো সহজভাবে দেখছে বিষয়টা অতোটা সহজ না। জনগণের আন্দোলনের সেন্টিম্যান্টকে ধারণ করার চেষ্টা করেছে এবং এর মর্ম বুঝেই বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে যেন কোনো পরিবর্তন আসে সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপিকে দোষারোপ করছে তাহলে বলতে পারি যে, তাদের এই চেষ্টাকে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে তাই জনগণের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক বলে দাবি করেছে। আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থা আছে বলেই ভারতীয় পণ্য আসে। বাজারের বিকল্প চিন্তা করতে হবে শুধু ভারত না অন্যান্য দেশের পণ্য না এনে যদি আমরা নিজেদের উৎপাদন ব্যবস্থা বৃদ্ধি করে স্বয়ংসর্ম্পূণ করে তুলি তাহলে আমদের দেশের জন্যই ভালো। এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে দেখার কিছু নেই।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক। কথা ফেসবুক পেইজের ‘রাজনীতিক কথা’ অনুষ্ঠানের ভিডিও কনটেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম