২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : [১] বেসরকারি খাতে স্থাপিতব্য ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার তথা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করবে কর্পোরেশন। বিল্ড-ওন-অপারেট (বি-ও-ও) ভিত্তিতে এবং নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট শর্তে সম্পূর্ণ নিজ খরচে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে যুক্তরাজ্যের ডিপি ক্লিনটেক ইউকে লিমিটেড এবং দেশিয় প্রতিষ্ঠান ইমপেক্ট এনার্জি গ্লোবাল লিমিটেড-এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম। প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ধরা হয়েছে ০.২০৯১ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১১ টাকা হিসাবে) ২৩.২১০১ টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে প্রস্তাবিত এ ট্যারিফ হার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। [২] বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে বেসরকারি খাতে বি-ও-ও ভিত্তিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিভিন্ন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত চারটি প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠায়। পরবর্তীতে তিনটি কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ কাগজ-পত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে মনোনীত কনসোর্টিয়াম ছাড়া অপর দুটি প্রস্তাবে কারিগরি ও আর্থিক যোগ্যতায় ঘাটতি থাকায় সেগুলো নন-রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। [৩] সূত্র জানায়, মনোনীত স্পন্সর কোম্পানি তথা কনসোর্টিয়াম নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে ও দায়িত্বে জমির সংস্থান ও প্রকল্প ব্যয় বহন করবে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছেÑ ময়মনসিংহের চর ঈশ্বরদিয়া মৌজার চর কালিবাড়ি ও শম্ভুগঞ্জ রোড। বিদ্যুৎ সরবরাহে স্পন্সর কোম্পানিকে প্রকল্প স্থান থেকে শম্ভুগঞ্জ ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি বাস পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ইভাকুয়েশন লাইন এবং ৩৩ কেভি বে নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পিডিবি’র মতামত অনুযায়ী সম্পাদন করা হবে।
[৪] সূত্র জানায়, স্পন্সর কোম্পানি শুরুতে ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়িয়ে ৬ মেগাওয়াট-এর প্রস্তাব দেয় এবং এটি চূড়ান্ত করা হয়। অন্যদিকে প্রাথমিক দর প্রস্তাবে প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ০.২১৫৮ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩.৯৫৩৮ টাকা) উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দর কষাকষির মাধ্যমে এটি কমিয়ে প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার ০.২০৯১ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩.২১০১ টাকা) চূড়ান্ত করা হয়। [৫] বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে, উল্লেখিত ট্যারিফ হারে ২০ বছর মেয়াদে স্থাপিতব্য ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকার তথা বিপিডিবি’র ব্যয় হবে আনুমানিক ১ হাজার ৯৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
[৬] সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে চারটি বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে একই শর্তে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে পিডিবি। বর্তমান স্পন্সর কোম্পানির প্রস্তাবিত ট্যারিফ হার পূর্বের সম্পাদিত চুক্তিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
[৭] সূত্র জানায়, পূর্বের সম্পাদিত চুক্তিগুলোর মধ্যেÑ ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছে প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা ০.২০৯১ ডলার। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করছে ইউডি গ্রীণ এনার্জি (এনসিসি বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড।
[৮] একই বছর (২০২০ সাল) ১২ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪২.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছেÑ প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা ০.২১৭৮ ডলার। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করছেÑ চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন।
[৯] গত ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪২.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছেÑ প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা ০.২১৫০ ডলার। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করছেÑ ক্যানভেস এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
[১০] সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার একটি চুক্তি করা হয়। এর ট্যারিফ হার হচ্ছেÑ প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা ০.১৯১০ ডলার। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করছেÑ যৌথভাবে সিদ্দিকী ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস জিএমবিএইচ-সৌদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড।