পিপলস লিজিংয়ে ভালো ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে : চেয়ারম্যান
মো. আখতারুজ্জামান : [১] কেলেঙ্কারিতে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড হাটিহাটি পা পা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে যাওয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি কয়েক মাস থেকে ছোট ছোট আকারে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে। বিনিয়োগকারিদের আগে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পরে গত ১০ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে। কোম্পানিটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে আমাদের অর্থনীতি সঙ্গে কথা হয় চেয়ারম্যান হাসান শাহীদ ফেরদৌসের।
[২] তিনি বলেন, নানা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে এখন আমাদের হাতে ১৫০ কোটি টাকা আছে। ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এই ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আগের জায়গা থেকে বেড়িয়ে এসেছি।
[৩] হাসান শাহীদ বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বন্ধ থাকার পর গত ১০ মার্চ থেকে পিপলস লিজিং শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, বিনিয়োগকারিদের মাঝে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, পিপলসের শেয়ার ভালো করবে। তাই বিক্রির হার কম।
[৩] এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারিদের অর্থ শেয়ারে রূপ দেওয়া নিয়ে এজিএমে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তবে এ নিয়ে অনেক কিছু ভাবনার বিষয় রয়েছে। কোনো পক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
[৪] তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ব্যবসা করার বিষয়ে আমাদের বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিলো। সেই বিষয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। আগে আমাদের চট্টগ্রামে শাখা অফিস ছিলো। এখন আমরা নিজেরাই অফিস চালু করবো না অন্য কোনো কোম্পানিকে দিয়ে অফিস চালাব সেই বিষেয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে অন্য কোম্পানিকে দিয়ে অফিসা চালালেও সেখানে আমাদের এক প্রতিনিধি থাকবেন। তবে চলতি মার্চ মাসেই চট্টগ্রামে ব্যবসা শুরু করব।
[৪] চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমরা এসএমই, হোম ও অটোমোবাইল এই তিনটি প্রডাক্টে ছোট ছোট লোন দিচ্ছি। এখন টাকা উঠিয়ে নেওয়ার চাপ কম। শেয়ারে রূপান্তর করার প্রস্তাব আসছে। বিনিয়োগকারিদের আগে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ৪০-৫০ কোটি টাকা দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে।
[৫] পিপলস লিজিং চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় বেশি মনযোগি হচ্ছি। কারণ এতে করে ব্যয় কমে আসবে। আগে আমাদের এই কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় ছিলো ৩’শর বেশি লোকবল। এখন তা কমিয়ে ৩২ জনে নিয়ে আসা হয়েছে। আর এটা হয়েছে প্রযুক্তির ফলে। যদিও আগে থেকেই প্রযুক্তি নির্ভর ছিলাম। ফলে যারা এই কোম্পানিকে পুরোপুরি ধ্বসে দিতে চেয়েছিল তারা তা পারেনি। প্রযুক্তি নির্ভর ছিলো বিধায় প্রমাণ রয়ে গেছে।
[৭] ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে এই প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক করার লক্ষ্যে কিছু দিনের মধ্যে টেন্ডার দেওয়া হবে। সরকার চাচ্ছে অটোমেশন, আমরাও সেটাই চাচ্ছি। সরকারের স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে তালমিনিয়ে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। আর অটোমেশনের অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আমরা যখন কোনো রিপোর্ট করি তা অটো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলে যায়। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অটো চলে যায়। এটা যেমন সময় বাচাঁয়, তেমন তথ্য গোপন রাখার সুযোগও কমে যায়। সচ্ছতা, সুশাসন ও ভালো আয় করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বেশ কাজে দিবে বলে আশা করেন তিনি।
[৮] উল্লেখ্য- পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে এ অবসায়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত অবসায়নের উদ্যোগ বাতিল করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভালোভাবে আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় সহায়তার আদেশ দেন। আদালতের ওই আদেশের ভিত্তিতি বিএসইসির সম্মতিক্রমে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই।