শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদ বেড়েই চলেছে
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার কোন ভাবেই দরপতন থামছে না। গতকাল বুধবারও বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহ তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে তিন কার্যদিবসই বড় দরপতন হয়েছে। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক। [২] এদিকে ১৩ দিনবাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিল এবার শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে। কিন্তু চাঙ্গা না হয়ে ব্যাপক দরপতন হচ্ছে। [৩] ঈদকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যতোদিন যাচ্ছে ততই হাহাকার বাড়ছে। এদিকে দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিলেও তা কোন কাজে আসছে না। ফলে প্রতিদিন পুঁজি হাড়াচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও বেড়েই চলেছে। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ তত বাড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরও ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।
[৪] শেয়ারবাজারের এই দরপতনকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাজারে দরপতনের পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। তবে সেসব কারণে বাজারে যে হারে দরপতন হওয়ার কথা, প্রকৃতপক্ষে দরপতনের মাত্রা তার থেকে বেশি। এখন বাজারে যে হারে দরপতন হচ্ছে তার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।
করোনা আতঙ্কে ২০২০ সালের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে লেনদেন বন্ধ করে দেন বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন আরও তিনজন। বিএসইসির দায়িত্ব নিয়ে নতুন কমিশন টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু করেন ওই বছরের ৩১ মে। বন্ধ থাকা লেনদেন চালু করার পাশাপাশি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেয় শিবলী কমিশন। অনিয়মে জড়িত থাকায় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। সতর্ক করা হয় সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। পরবর্তীকালে আইসিবি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় এক ডজন দুর্বল কোম্পানির আইপিও। এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রশংসা কুড়ান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। করোনা মহামারির মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার।
[৫] চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হওয়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্রের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।
[৬]এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, শেয়ারবাজারে উঠানামা করবে এটা নিয়ম। এছাড়া দেশি বিদেশী ও সরকারী ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনতে হবে। ফ্লোর প্রত্যাহারের কারনে অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে ছিল। তিনি আরও বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে অনাস্থা সে কারনে দর পতন হচ্ছে। [৭] এবিষয়ে বিনিয়োগকারী জামান বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানসহ কমিশনের মেয়াদ শেষের দিকে যদি বাড়ানো হয় তাহলে এখনি ষ্পষ্ট হওয়া উচিত। তাতে বিনিয়োগকারীদে মঙ্গল হবে। জামান আরও বলেন, টানা দরপতনে কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। ফলে অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রির করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম প্রতিদিনই কমছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।
[৮] গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১.৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১৪.৮১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২.৮৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি টাকার বেশি। ডিএসইতে ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ৩২১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির। [৯] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ০১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট। সিএসইতে ২২৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের। আগের দিন সিএসইতে ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৭টির, কমেছিল ১৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।