সামিটের গ্যাসভিত্তিক তিনটি ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ দ্বিতীয় দফা বাড়ল
সোহেল রহমান : [১] বেসরকারি খাতে স্থাপিত সামিট পাওয়ার লিমিটেড-এর গ্যাসভিত্তিক তিনটি ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় আরও ৫ বছর বাড়িয়েছে সরকার। প্রতিটি ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটি আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় অবস্থিত।
[২] বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
[৩] বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-এর সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবটিসহ তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৭৯ কোটি ৮৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
[৪] তিনি জানান, বৈঠকে সামিটের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানোর পাশাপাশি বর্ধিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ক্রয়ে নতুন ট্যারিফ হার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। [৫] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পন্সর কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেড-এর সঙ্গে সরকারের মূল ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট শেষ হয়। পরবর্তীতে প্রথম দফায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট উত্তীর্ণ হয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে এবার দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাপবিউবো)। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ গত ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে।
[৬] তিনি জানান, নতুন বর্ধিত সময়ের জন্য নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট শর্তে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরই প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের নতুন ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৮২ টাকা। সে হিসাবে বর্ধিত মেয়াদে ৫ বছরে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ সামিট পাওয়ার-কে মোট ৫৪৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
[৭] তিনি আরও জানান, নতুন ট্যারিফ প্রস্তাবে আগের তুলনায় বিদ্যুতের দাম হ্রাস পাওয়ায় বর্ধিত মেয়াদে সরকারের প্রায় ৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।
[৮] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর আতাধীন ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের টেস্টিং ও কমিশনিং কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে যথাযথ শক্তির টাগবোট সংগ্রহ, পাইলটেজ ও আনুষঙ্গিক সার্ভিসসমূহের জন্য প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড-এর সঙ্গে ৫ম সম্পূরক চুক্তি সম্পাদনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সম্পূরক চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আরও অতিরিক্ত ৫৭ লাখ ডলার ( বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে।
[৯] প্রসঙ্গত: প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে ১টি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাংক ফার্ম ও গভীর সমুদ্রে ১টি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুংরিং এবং ১১০ কিলোমিটার দুইটি ডাবল পাইপলাইন স্থাপনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোপূর্বে পৃথক চারটি সম্পূরক চুক্তি সই করা হয়েছে।
[১০] সমন্বয় ও সংস্কারসচিব জানান, এছাড়া বৈঠকে খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১-এর পূর্ত কাজের ৩য় ভেরিয়েশন একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১১-এর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় কিছু আইটেম হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়ায় ৩য় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৭০ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় বেড়েছে।