মঈনুদ্দিন বা মঈন-উ-আহমেদ : টাকা পাচারের পথনির্মাতা!
সাইফদ্দিন আহমেদ নান্নু
মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে দেশের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা করেছে মঈনুদ্দিন (আমি তারে মঈন-উ-আহমেদ বলি না)। ক্ষতিটা হলো, পরিকল্পিতভাবে দেশের বড়, বড়, ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মামলা, টাকা আটক, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দীর্ঘমেয়াদী সংকট সৃষ্টি করা। সন্দেহ নেই এই ব্যবসায়ীদের ৯৯ ভাগই কালো টাকার মালিক। এরা হঠাৎ করেই বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছে, তাও চরম সত্য। তবে এরা দুই নম্বরি করে, ধান্ধা করে বড়লোক হলেও তখন পর্যন্ত তারা সেই কালোটাকা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুলভাবে বিনিয়োগ করে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সবল এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে সেসময়ের প্রবৃদ্ধির হারটাও ছিল ৮এর কাছাকাছি। শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই তখন লোভনীয় সরকারি চাকরি না করে মোটা বেতনে কর্পোরেট হাউজে যোগ দিতো।
পৃথিবীর অনেক দরিদ্র দেশ এদের মতো কালো টাকার মালিকদের দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়ে সেসব দেশকে স্বাবলম্বী করেছে, তাদের শিল্পখাত বিকশিত হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় বড়, মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর কালো টাকা উদ্ধারের নামে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে এই মঈনুদ্দিন গংরা। নিয়ম বহির্ভূত ও বেআইনিভাবে ব্যাংকগুলোতে হানা দিয়ে কার একাউন্টে কত টাকা আছে সেসব গোপনীয় তথ্য জানাতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছে। দুদকের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিও করেছে। মোটাদাগে বলতে গেলে, ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরা হয়েছিল সেসময়। ওয়ান ইলেভেনের পর হয়রানি, মামলা, নির্যাতনের দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবসায়ীরা আবার স্বাভাবিক ব্যবসাজীবন শুরু করেন। কিন্তু তাদের ভেতরের আতঙ্ক, ভবিষ্যৎ জীবনে আর্থ-সম্পদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর অনিশ্চয়তার বিষয়টি কাজ করতে থাকে। তাদের ভাবনায় দুলতে থাকে দুদশ বছর পর আবার যদি মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন মার্কা কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তবে তাদের অর্থ-সম্পদের সুরক্ষা দেবে কে?
ওয়ান ইলেভেনকালের ভীতিকর অভিজ্ঞতা এবং নিজেদের টাকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে দেশকে আর নিরাপদ ভাবতে পারেনি এরা। ফলে তাদের মধ্যে দেশের বাইরে সম্পদ গড়া, বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখাটাকেই বেস্ট অপশন মনে করেছে। একই সাথে ক্ষমতার বলয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে দেশ থেকে টাকা পাচারের নিরাপদ পথ বের করে নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া গড়ে তোলাসহ ধুমছে লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। ব্যবসায়ীদের সাথে একই আতঙ্ক মাথায় নিয়ে একই পথে হেঁটেছে দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিকরাও। কারণ তারাও মঈনগংদের কোপানলে পরেছিল। ওয়ান ইলেভেনকালে তথাকথিত দুর্নীতি দমনের নামে তারা যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল সে আতঙ্কই দেশ থেকে টাকা পাচারের মনোভূমিকে উর্বরতর করেছে। নইলে কালোটাকার মালিক ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিকরা টাকা পাচারে এমন বেপরোয়া হত বলে আমার মনে হয় না। সেক্ষেত্রে এই টাকার একটি বড় অংশ দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসাবাণিজ্যে বিনিয়োগ হত। শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াতো দেশের অর্থনীতি, কমতো আমদানী নির্ভরতা, বাড়তো বৈদেশিক আয়।
এসবের গেড়া কেটে সটকে পরেছে মঈন গং। মঈনুদ্দিন গংরা ক্ষমতা হাতে পেয়ে যতগুলি অপকর্ম করেছে তার সবচেয়ে বড় কুফল টাকা পাচারের মহাসড়ক নির্মানের চিন্তা ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিকদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া। ফলে গত একযুগ ধরে টাকা পাচারের সুনামী বইছে আর দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, শিল্প কারখানায় কালোটাকার বিনিয়োগ চরমভাবে কমেছে। আর মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাত থেকে টাকা-পয়সা লুটপাটের ভয়ংকর প্রবণতা। ৩০.৩.২৪। ফেসবুক থেকে