ঢাকা-সিউলের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে
অরুন কুমার গোস্বামী : দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ঢাকায় তার দূতাবাস স্থাপন করে ও ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সিউলে একটি দূতাবাস স্থাপন করে। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থনীতি ও এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, কোরিয়া, বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, রাজনীতি, বিনিয়োগ, বাংলাদেশি শ্রমশক্তি নিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, উচ্চশিক্ষা সম্পর্ক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা ইত্যাদি। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বিনিয়োগের স্তর ও শ্রমশক্তি রপ্তানি মূলত কোরিয়ান সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টার কারণে। কোরিয়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিকাশের জন্য প্রাথমিক প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে, যা বাংলাদেশের বর্তমান রপ্তানি খাতের প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে দেখা হয়। এই সহায়তায়, শিল্পটি তার বর্তমান একত্রিত অবস্থানে ক্রমশ অগ্রসর হয়েছে।
বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যায়। তারপর থেকে আমাদের দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকরা কোরিয়ায় শুরু হওয়া চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের কঠোর প্রচেষ্টার সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্ক একটি পাথুরে-দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩.০৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, বাংলাদেশ ৬৭৮ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে ও দক্ষিণ কোরিয়া ২.৩৫৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি করেছে। তবে ঢাকা ও সিউলের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) মতো একটি দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে। যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হবে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাম্প্রতিক মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার তাৎপর্য তুলে ধরে ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে।
সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা তাদের অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে কথা বলেছেন। বিমান পরিষেবা চুক্তি আপডেট করা থেকে শুরু করে উচ্চ-স্তরের সফর বিনিময় পর্যন্ত, সমস্ত পক্ষ তাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বর্তমান কাঠামোকে শক্তিশালী করতে আগ্রহী। সরাসরি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প-বিশেষ করে অত্যাবশ্যক রেডিমেট-মেড গার্মেন্টস (আরএমজি) সেক্টরের আধুনিকীকরণের উপর ফোকাস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তদুপরি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ বিভাগ থেকে বাংলাদেশের আসন্ন প্রস্থানের কারণে নতুন চুক্তি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার উপর যথাযথভাবে জোর দেন। অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখতে ও এই পরিবর্তন জুড়ে চলমান প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে সক্রিয় পদক্ষেপের প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইপিএ-এর মতো চ্যানেল অনুসন্ধানের মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে কারণ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। ইপিএ ও জ্ঞান-প্রযুক্তির চলমান আদান-প্রদানের মতো সরঞ্জামগুলোর তদন্ত প্রদান করে এ একটি পারস্পরিক উপকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিজ নিজ জনসংখ্যার জন্য টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির প্রচারের জন্য সহযোগিতার একটি নতুন পর্যায় শুরু করার জন্য ভালো অবস্থানে রয়েছে। কারণ তারা সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য একটি সাধারণ উৎসর্গ ভাগ করে নেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের দেশ হিসেবে আবেদন অর্জন করেছে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। ১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ কোরিয়া সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি যা আমাদের সম্ভাবনা প্রথম দিকে দেখার পরে আমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছিলো। অতএব, বিশাল পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি থেকে আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনা যথেষ্ট উৎসাহজনক ও আমাদের অগ্রগতির পথে সম্ভাব্য বিপ্লব ঘটাতে পারে।
স্যামসাং ও এলজির মতো কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে প্রযুক্তির জগতে শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য পরিচিত একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য এটি কেবলমাত্র অর্থপূর্ণ হয়। শিল্পের ডিজিটাইজেশনে দক্ষতার কারণে ও আমাদের বর্তমান সরকারগুলোর ইচ্ছার কারণে এখানেই বাংলাদেশে তার পণ্য উৎপাদন শুরু করা। বাংলাদেশের সব দিককে আধুনিক করা। স্যামসাং ও এলজির মতো বহুজাতিক আইটি বেহেমথের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশে একটি যৌথ উদ্যোগ ব্যবসার মাধ্যমে দ্রুত উৎপাদন শুরু করার জন্য আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বন্ধ করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ এখন একটি দুর্দান্ত সুযোগের মধ্যে রয়েছে যা দক্ষিণ কোরিয়ার হাতছাড়া করা উচিত নয়। আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলোকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য শত শত একর জমি অফার করেছি যাতে তারা এখানে আরও বেশি খরচ করতে পারে। আমরা একটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ চক্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন ঢাকা ও সিউলের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।
লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (সিএসএএস), ঢাকা। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার