প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এক ঘন্টার স্কুল
কুমিল্লা প্রতিনিধি : [১] ঘড়ির কাটা বিকেল ৪টা। শিক্ষার্থীদের কলোকাকলিতে মুখর মুগসাইর গ্রাম। বই-খাতা হাতে নিয়ে মনের আনন্দে ছুটে চলছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। কারো হাতে বেলুন, কারো হাতে চকলেট আর উপহারের খাতা-কলম। এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর ইউনিয়নের মুগসাইর গ্রামে এক ঘন্টার স্কুলে গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য।
[২] সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের শেষের দিকে মুগসাইর গ্রামের তরুণদের উদ্যোগে ভালোবাসার ঘর নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজে অসহায় ঘরহীন ব্যক্তিদের নতুন ঘর প্রদান করা ও আর্থিক সহায়তা করা। এরই আলোকে একে একে ৬টি ঘর প্রদান এবং বহু মানুষকে করা হয় আর্থিক সহায়তা।
[৩] চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষা কর্মসূচি হাতে নেয় স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন। স্থানীয়দের সহায়তায় মুগসাইর লাইফ মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে উদ্বোধন করা হয় স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য এক ঘণ্টার স্কুল। উদ্বোধনের পর ব্যতিক্রমী এই স্কুলে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে পাঠদান। নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি গণিত ও ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।
[৪] এখানে শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৬ জন শিক্ষার্থী। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে স্বতন্ত্র এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাড়ালেখায় মনোযোগী করতে বেলুন, চকলেট ও খাতা-কলম উপহার দেওয়া হয়। এতে খুশি অভিভাবকরাও। প্রত্যন্ত গ্রামে শহরের আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা বিনামূল্যে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় তরুণ উদ্যোক্তাদের।
[৫] মুগসাইর এগার গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীরা ১ ঘন্টার স্কুল উদ্বোধন করে সফল হয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা ১ হাজার কিংবা ২ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়তে পারছে না, তারা এখানে বিনামূল্যে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।
[৬] মুগসাইর এগার গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসহাক খাঁন বলেন, বিনামূল্যে স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এটি প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। তারা মুগসাইর গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আমি তাদের সফলতা কামনা করছি।
[৭] এক ঘণ্টার স্কুলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আমাদের ভালোবাসর ঘর নামে একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। স্থানীয় এবং প্রবাসীদের সহায়তায় এর মাধ্যমে সমাজে নানা রকম ভালো কাজ করে থাকি। তারই অংশ হিসেবে এক ঘণ্টার স্কুল স্থাপন করেছি। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বিকেলে ১ ঘণ্টা সময় দিয়ে থাকি। সেখানে গণিত ও ইংরেজিসহ মানবিক বিষয়গুলো পড়ানো হয়। বর্তমানে আমাদের এই স্কুলে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। আমার বিশ্বাস সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুরা একদিন বাংলাদেশ তথা মুগসাইর গ্রামের সুনাম বয়ে আনবে। এই প্রত্যাশা থেকেই আমরা স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি।
[৮] ইউছুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া বলেন, মুগসাইর গ্রামের কিছু উদ্যোমী তরুণ শিক্ষার্থী এক ঘণ্টার স্কুল চালু করেছে। বিনামূল্যে তারা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে তারা শিক্ষার মানোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করছি। এটি পরিচালনা করতে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমার পক্ষ থেকে যতটুক সম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করবো।