বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজার ভালো আমাদের দূরবস্থা কেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
শেয়ারবাজার ওঠা-নামা করছে। ৬ হাজারের ঘরে আছে। যা মোটেও সুবিধার নয়। উন্নতিও বলা যাবে না। বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের অভাবের পেছনের একটি বড় কারণ আছে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, গর্ভনরের সহযোগিতা নেই, অস্বচ্ছতার কারণে মানুষ বেশিদিন টাকা রাখে না। ব্রোকারেজ হাউজগুলো ফোর্সড সেল করে দেয়। আরেকটি প্রধান সমস্যা হলো স্বল্প আকারে আর্থিক লাভ। বাংলাদেশের যে আর্থিক অবস্থা, ডলার সংকটসহ শেয়ারবাজারে পজেটিভ সিগন্যাল নেই। এরকম নানান সমস্যার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে চায় না। যার ফলে শেযারবাজারের সূচক নিম্নমুখী থেকে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, সরকার ও অর্থমন্ত্রণালয় আর্থিক খাত নিয়ে অনেক বক্তব্য দেয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারে না।
তারা আর্থিক খাত ও উন্নয়ন নিয়ে কেবল ভাষণ দিয়ে যান, কিন্তু আর্থিক খাতের উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এমনকি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। শেয়ারবাজারের অবস্থা বহুদিন যাবৎ খারাপ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের বাঁচার আশা থাকবে না। অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা কিন্তু ভালো চলছে। বাজারে ওঠা-নামাও আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো করুণ অবস্থা না তাদের। পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে অর্থ ও বিনিয়োগ বেশি যেমন আছে, তেমনি সেখানকার মানুষের আত্মবিশ্বাসও আছে। আমাদের দেশে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা রয়েছে, আর সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক দুর্বলতাও আছে, যে কারণে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হচ্ছে না। শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে আমাদের উচিত স্বচ্ছতার সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদান করা, বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, বিভ্রান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি না করা। কোনো কোনো সময় শেয়ার হঠাৎ করে বেড়ে যায়, আবার নেমে যাবেÑ এটা কোম্পানির ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে।
আরেকটি দিক হলো বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার কিনে আনা প্রাইভেট কোম্পানির একটা সেক্টর ব্যাংকের সিকিউরিটি এজেন্সি হিসেবে কাজ করতে পারে। ভালো বড় বিনিয়োগ বিভিন্ন কনফিডেনশিয়াল কোম্পানি থেকে আনা উচিত, কিন্তু তা তারা করছে না। সরকারি কিছু লাভজনক কোম্পানি আছে সেখানেও বিনিয়োগের কাজ করতে পারে। এর ফলে শেয়ার মার্কেট কিছুটা দাঁড়াতে পারতো। কিন্তু তারা তেমন সাড়া দিচ্ছে না। বিও একাউন্ট যাদের তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের টাকা বিনিয়োগ করে বাড়তি আয়ের জন্য, কিন্তু বাজারের ওঠা-নামা দেখে হতাশ হয়ে বিনিয়োগ করা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বিও কমে যাচ্ছে। মানুষের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকার ফলে লাভ করতে না পেরে তারা তাদের বিনিয়োগ ফোর্সড সেল করে দিচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে ফোর্সড সেল বেড়েছে। লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর