বাংলাদেশ কীভাবে এসডিজি অর্জন করছে?
ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসান : স্থানীয় পর্যায়ের প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে সূচকগুলো প্রণয়ন করা হলেও মূলত বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত ও লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রাখবে। এছাড়া অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো, বাংলাদেশে পরিকল্পনা প্রক্রিয়া ঐতিহ্যগতভাবে টপ-ডাউন পদ্ধতি অনুসরণ করে। অগ্রাধিকার সূচকের তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্থানীয় সরকার সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী এখন উন্নয়নের অগ্রাধিকার ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতন। তাই পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় জাতীয় অগ্রাধিকার ও স্থানীয় অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যায়েই হোক না কেন। চিহ্নিত অগ্রাধিকারগুলো নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবে: জাতীয় সূচকগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এপিডি) ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নীতি প্রণয়নে দীর্ঘ/মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় যোগ দিতে পারে। আঞ্চলিক (জেলা) সূচকগুলো এডিপি, মন্ত্রণালয়/বিভাগ অনুযায়ী পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের জন্য ভালো এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে। উপ-আঞ্চলিক (উপজেলা) সূচকগুলো এডিপি, মন্ত্রণালয়/বিভাগ পর্যায়ের পরিকল্পনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। উপজেলা পর্যায়ের পরিকল্পনা ও অ-রাষ্ট্রীয়/এনজিও পরিকল্পনা।
স্থানীয় অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা এসডিজি স্থানীয়করণের একটি প্রাথমিক কাজ, বাংলাদেশ মডেলের পূর্ণ ব্যবহারের দিকে মাত্র এক ধাপ এগিয়ে। ব্যায়াম থেকে পূর্ণ সুবিধা পেতে নিম্নলিখিত ক্রিয়াগুলো করা দরকার। জাতীয় স্তরের পরিকল্পনা: পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রণীত পাঁচ বছর/মধ্য-মেয়াদী/স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাগুলোকে জাতীয় অগ্রাধিকার সূচকগুলো বিবেচনা করতে হবে। মন্ত্রণালয় পর্যায়ের পরিকল্পনা: জাতীয়, জেলা ও উপজেলা অগ্রাধিকার সূচক বিবেচনা করে এডিপি, কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতি সংক্রান্ত নথি তৈরি করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বিভাগ ও সরকারি সেক্টরের সংস্থাগুলোতে পরিকল্পনার জন্য জেলা ও উপজেলা অগ্রাধিকার সূচকগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে অগ্রাধিকার ও কর্মের ম্যাপিং: প্রতিটি জাতীয় অগ্রাধিকারের জন্য লিড ও সহ লিড মন্ত্রণালয়/বিভাগ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সারিবদ্ধকরণ: ডিপি, এনজিওগুলোর প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলো জাতীয়, জেলা ও উপজেলা অগ্রাধিকার সূচকগুলোর সঙ্গে সারিবদ্ধ হওয়া দরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো (এনজিওএবি) ও স্থানীয় প্রশাসন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রকল্প ও স্কিমগুলো ট্র্যাক করতে সহায়ক হতে পারে। কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন: অগ্রাধিকার বাস্তবায়নযোগ্য কর্মে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন, সমস্ত প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে তিনটি স্তরেই কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।
মনিটরিং ও মূল্যায়ন: পরিকল্পনা প্রক্রিয়া চলাকালীন বা প্রোগ্রাম ও প্রকল্প চালু করার সময় এই চিহ্নিত সূচকগুলো বিবেচনা করা হয় কিনা তা ট্র্যাক করার জন্য একটি মনিটরিং প্রক্রিয়া তৈরি করা দরকার। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এসডিজি মনিটরিং কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এসডিজি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি জাতীয় পর্যায়ে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। স্থানীয় অভিনেতাদের সম্পৃক্ত করা: স্থানীয় পর্যায়ের সম্প্রদায় ও বেসরকারি খাতকে সরকারি খাতের সংস্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে স্থানীয় সংস্থানগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে স্থানীয় অগ্রাধিকারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পদক্ষেপ নিতে। এটি কর্মের স্থানীয় মালিকানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। স্থানীয়করণের ধারণাটি এখনও একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ধারণা যার জন্য এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, সমর্থন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারি সংস্থাগুলোর প্রস্তুতির পাশাপাশি নীতিগত ঐকমত্য ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশে এসডিজি স্থানীয়করণের বেশিরভাগই জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে স্থানীয়কে কেন্দ্র করে। এজেন্ডা ২০৩০-এ অংশীদারিত্বের উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও, এটির বাস্তবায়নে স্থানীয় সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের সীমিত ক্ষমতা, সম্পদ, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এসডিজি স্থানীয়করণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডার মধ্যে একটি ভালো ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি জয়-জয় প্ল্যাটফর্ম অপরিহার্য। লেখক : গবেষক ও জনপ্রশাসন অনুশীলনকারী। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস।
সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন