ছয়-সাড়ে ছয়শ টাকাইবা কেন হবে গরুর মাংসের দাম?
আমিনুল ইসলাম
ভেবেছিলাম, গরুর মাংসের দাম আর বিক্রেতা খলিল বিষয়ে কিছু লিখব না। কিন্তু মনে হলো-সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে না হলে দায় থেকে যাবে। দেশের বিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানীরা তো দিনে-রাতে বিকোচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বোধ করি ভালোকিছু আর আশা করা উচিত হবে না। তো মাংস বিক্রেতা খলিল সাড়ে সাতশো-আটশো টাকার গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৫৯৫ টাকায়। এরপর অবশ্য দাম কিছুটা বাড়িয়েছিলেন শুনেছি। আবার কমিয়েছেনও সে যাহোক, এ খলিলের নাম এখন আমরা সবাই জানি। কেন জানি? কারণ তিনি নাকি মাংসের দাম কমাতে ভূমিকা রাখছেন। আদৌ কি তাই?বিক্রেতা খলিলকে নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি যা করছেন ভালোই করছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে খলিলকে হিরো বানানো হলো, এতে কি মাংসের দাম কমেছে? যদি কমেও, কত কমেছে? এদেশে মূল সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলে না। ছয়-সাড়ে ছয়শ টাকাইবা কেন হবে গরুর মাংসের দাম? এই যে খলিল কম দামে ছয়শো টাকায় মাংস বিক্রি করছে। এ দামে কোনো নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্তের পক্ষে কি আদৌ মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব? সম্ভব হলে কয়দিন? মাসে একদিন হবে হয়তো। সেটাও হয়তো অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না।
কোথায় আলোচনা হওয়া উচিত মাছ-মাংসের দাম কেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সেখানে আলোচনা হচ্ছে কি নিয়ে? খলিল ছয়শ টাকায় মাংস বিক্রি করছে। এখন খলিল হয়ে গিয়েছেন হিরো। দেশের অর্ধেক মানুষ তাঁর নাম জানে। এদেশে আবহমানকাল থেকে অনেক মানুষ ব্যক্তি পর্যায়ে সাধারণ গরিব মানুষদের দিনের পর দিন বিনে পয়সায় খাইয়ে আসছেন। সেখানে চার আনা পয়সাও দিতে হয় না। এমন অনেক মানুষকে আমিই চিনি। যারা রোজা, ঈদ কিংবা অন্যান্য উৎসবের সময় মানুষদের বিনে পয়সায় ভালো খাবার বিলিয়ে বেড়ান। আপনি কি তাদের কারও নাম জানেন? দেখেছেন কোনোদিন তাদের নিয়ে মিডিয়া হাউজগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন? তাহলে খলিলকে নিয়ে কেন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন? আবারও বলে নিই, খলিলের উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
তিনি ভালো কাজ করছেন। তাঁকে উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু সে উৎসাহ কেন দেওয়া হচ্ছেÑ এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এ ধরনের খলিল তৈরি করা হয়। মানুষ তখন তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ভাবতে থাকে-নিশ্চয় হবে কিছু একটা। দিন শেষে গরিব মানুষদের ভাগ্য আর ফেরে না। অন্যরা এ সুযোগে হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নেয়। খলিলরা মাংস বিক্রি করছেন, সে উচ্চ-মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চ-বিত্তদের কাছে। সাধারণ মানুষের নাগালে তো সে মাংস নেই। কী, নিশ্চয় প্রশ্ন করবেনÑ সাধারণ মানুষ কারা? ঘরে বসে এ লেখা পড়ে এমন প্রশ্ন করা খুব সহজ। কিছু করতে হবে না। স্রেফ ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটুন। হাঁটার সময় রোজকার মতো হাঁটবেন না। আশপাশে তাকাবেন। উত্তরটা নিজেই পেয়ে যাবেন। কিংবা একবার নিজের দিকে ভালো করে তাকান। শো-অফে মোড়ানো আপনি কি আদৌ ভালো আছেন? নাকি ভালো থাকার অভিনয় করে চলেছেন। ৩০-৩-২৪। ফেসবুক থেকে