![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
শিক্ষা ব্যয়বৃদ্ধি ও অভিভাবকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2024/04/Abul-Kasem-Fazlul-hq-400x228.jpg)
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক
দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে বলে আমার ধারণা। সব জিনিসের দাম বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও খরচ বেড়েছে। শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষার উপর নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যয় এতোটা বাড়ানো একটি বড় ব্যাপার। সবকিছুর দাম সীমাবদ্ধ রাখা বা কমানো উচিত। দেশের যারা সচেতন নাগরিক, স্কুলের শিক্ষক বা সচেতন অভিভাবক তাদের কাছে মনে হয় যে জাতির প্রয়োজন শিক্ষা। জাতি গঠন বা রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষা দরকার, যার মাধ্যমে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে যাওয়া যায়। কিন্তু এগুলো ব্যাহত হচ্ছে।
আমরা দেখেছি ১৯৭২ সালে বিজ্ঞানী খুদরত-ই-খুদার নামে বাংলাদেশে প্রথম একটি শিক্ষা কমিশন করা হলো। সেটি ভালো ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করেছিলো। কিন্তু মুজিব সরকার পতনের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে এবং যে সব কমিটি, কমিশন ইত্যাদি গঠন করেছে তার কোনোটিই পরিচ্ছন্ন বা ভালো করে কোনো রিপোর্ট তৈরি করতে পারেননি। হয়তো বানান ভুল বা এরকম নানা ধরনের সমস্যা ছিলো। তখন শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। এখন যারা সবার আগে চলতে চায় বা নিজেকে বড় করে জাহির করতে চায়, তাদের কারো মধ্যে তখন দেখতে পাইনি স্বাধীন বাংলাদেশ বা নিজেদের একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলার মনোভাব।
জনগণ এখন একধরনের হতাশার মধ্যে পরে গেছে বলে আমি মনে করি। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে শিক্ষা কমিশন, সিলেবাস, কারিকুলাম তৈরি করা উচিত। যারা শুধু আমলাতান্ত্রিক নির্দেশ মেনে চলেন তাদের দ্বারা এসব করা সম্ভব না। এজন্যই স্কুলের শিক্ষক বা অভিভাবকরা দেশের মধ্যে যা আছে, তা দিয়েই তাদের সন্তান কীভাবে ভালো করতে পারে সে চিন্তা করছে। সবকিছুর দাম বর্তমানে ঊর্দ্ধমুখী। সেই সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাও যোগ দিচ্ছে। এতে অনেকের খুব অসুবিধা হবে। যাদের বেশি টাকা আছে তারা ঠিকঠাক থাকবে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বচ্ছল অবস্থায় নেই। আমাদের ৩০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক দল বা সাংস্কৃতিক সংগঠন নেই যাকে অবলম্বন করে নতুন মত বা নতুন চিন্তা আসতে পারে। এই হলো আমাদের জাতীয় বাস্তবতা। একটানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো, তার আগেও ৫ বছর ছিলো, বর্তমানেও আছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে কিছু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হয়। আমরা আশা করতে পারি, সরকার বুঝতে চেষ্টা করবে যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষানীতি কী হবে। আমরা পরিবর্তন চাই। একসঙ্গেই যে পরিবর্তন হতে হবে তা নয়। কিন্তু পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি।
কারণ প্রতিবার কোনো না কোনো বিতর্কের জায়গা থাকেই। একটি পদ্ধতি ১০-১২ বছর চলার পর আবার নতুন কমিটি করে সেটিকে পাল্টে ফেলা হয়। নতুন নতুন কমিটি বা কমিশনের দ্বারা ভালো চিন্তা যে আসে তা দৃশ্যমান নয়। ভালো চিন্তা আশা খুব দরকার। যারা খুব দরিদ্র অবস্থায় আছে, তারা দারিদ্রের কারণেই ছেলেময়েদের শিক্ষা থেকে সরিয়ে নেয় বা শিক্ষা ক্ষেত্রে দিতে চায় না। তারা মনে করে যে এই শিক্ষাটি তাদের জন্য না, এটি শুধুই বড়লোকদের জন্য। এখন দারিদ্রতা কীভাবে কমানো যাবে, কর্মসংস্থান কীভাবে বাড়ানো যাবে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা দরকার। সব সরকারই চেষ্টা করে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে। কারণ এতে জনগণের সমর্থন পাওয়া সুবিধা হবে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো কোনো সরকার মাঝে মাঝে কথা বলে, কিন্তু ঝরে পড়া ব্যপারটি তো নতুন নয়। ২০-৩০ বছর আগেও শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েছে। সরকার যখন নতুন কিছু করতে যায় এবং অন্যদিক থেকে সমালোচনা আসে, তখনই ঝরে যাওয়া ইস্যুটি সামনে আসে। ঝরে যাওয়ার সমাধান অর্থনৈতিকভাবে করতে হবে। আর এই কাজটি করবে সরকার।
পরিচিতি: শিক্ষাবিদ। মতামত গ্রহণ করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)