ইকবাল আনোয়ার
রমজান হচ্ছে মধ্যবিত্ত, ভদ্র, চাঁদাবাজির ক্ষমতা ও সাহসহীন, নির্ধারিত আয়ের মানুষের হিমসিম খাবার আর নাজেহাল হবার মাস। এবাদতে মন দিবেন কী, বাজেট কীভাবে করে দরিদ্র দেশের, তার একটা প্রাকটিক্যাল গবেষণা করেন তারা। কেবল পার্থক্য- তারা পিএইচডি পান না, তাদের গবেষণায় ‘পপুলেশন’ কম। তবে কসরত একই রকম, আরো বেশি। চোখে জল এলে তারা কেঁদে হালকা হতেও পারেন না। সুটকেস হাতে নিয়ে সংসদে সবার সামনে তার দশা বর্ণনাও করতে পারেন না। তারও মন চায় দান করতে। তিনি পারেন না। সবাইকে খুশি করতে তিনি পারেন না, তাই উপাধী পান-কিপটা।
প্রিয় নারীর শাড়ি কেনা হলে, তিনি আলহামদুলিল্লাহ পড়েন, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে তার- যাক বড়টা হয়ে গেলো। তিনি তো পরেছেন এমন ফাঁদে, না তিনি যাকাত দিতে পারেন, না নিতে পারেন। আরাফ। যাকাতের মাসে আবার ডাকাতির মহড়া। মিছা কথা, দাম বাড়ানো, পঁচা ধরিয়ে দেয়া, লটারীর লোভের ফাঁদ, কী একটা ধরো মারো খাও, ঘামে চরমর, গাড়ি, রিকশার চরম শব্দ, কোনাকাঞ্চি দিয়ে গতর ঢুকিয়ে দেওয়া, চিতিয়ে কিছু ভালো মানুষের ভিখারি- শুইয়ে রাখা, রঙ্গিন গেইট, লাইটের আকর্ষণ, শয়তান বেঁধে রাখা মাসের শয়তানিরর নিতন ধারা, এসব তো ডাকাতি, ফেরেববাজিই বটে। তাদের আবার তারাবি খাড়া। প্রথম দিকে রাস্তা বন্ধ, মাঝখানে খা খা, শেষের দিকে আবার রাস্তা মারা।
সব হাদিস বাদ দিয়ে কেবল নতুন কাপড় কেনার, সাজ-সাজুনীর হাদিস পালনে বড়ই সচেষ্ট মুসলিম এক পায়ে খাড়া। তারা কারা? দুরমার করে পথে নেমে চলাচল বন্ধ করে ইফতার, বড় বাপের পোলায় খায়, খাসির লেগ পিস, লিফটে লিফটে ঘুর্ াদেশে না অভাব। এদের উৎস কি? বিদেশে যারা কেনা কাটা করতে যান, পবিত্র মাসের মর্যাদা বাড়িয়ে দিতে, তাদের কথা এ লেখায় বলতে মানা। গরীব একটা কাপড় ধরলে ছোঁ মেরে নেয়া রমাদানপ্রিয় এরা কারা? দেশে না নাই নাই। এই কি রমজানের পবিত্রতা, কৃচ্ছতা?
এই বুঝি রমজানের সাধনার ধারা? মধ্যবিত্তের ইফতার হলো হিমসিম খাওয়া। দিতে পারেনা বলে তার মন কাঁদে, এই তার প্রভুর নিকট ফরিয়াদের কান্না কাটি করা। নাজেহাল হয়ে, ঠকানী খেয়ে, অপমানিত হয়ে, অপদস্ত হয়ে, অপারগতার গ্লানী সহ্য করেও মনকে বুঝ দেয়াই তার বিরত থাকা, বর্জন করা, মনস্তাপ জ্বালিয়ে দেওয়া। এভাবেই মধ্যবিত্তের মাধ্যমে রমজানের সব কটি অর্থের সুবিচার ঘটে। তাই তারাই সৌভাগ্যবান বটে।
লেখক : চিকিৎসক