পাট থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরি প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ ও ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ৮৫ কোটি ব্যয়
নাদিম মাহমুদ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্ট (২০২২) বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক গবেষণা বাজেট ১০ কোটি ৯৭ লাখ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৬৫ লাখ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ কোটি ৯৮ লাখ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ কোটি ৯ লাখসহ দেশের ৫১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য মোট বাজেট ছিলো ৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৯ শিক্ষার্থীদের জন্য এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অথচ শুনলাম দেশের এক অধ্যাপক ১০০ কোটি টাকার বরাদ্ধ পাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। পাট থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরির এই প্রকল্প ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে তিন বছরেই। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বায়োডিগ্রেডিবল ব্যাগ অনেক আগে থেকে কম খরচে ব্যবহার হচ্ছে। এরপরও সরকারের এই উদ্যেগ নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয়। তবে যে দেশে পঞ্চাশের অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণায় বার্ষিক ৮৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে একজন অধ্যাপককেই একশো কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া একটু দৃষ্টিকটু এবং লজ্জার কারণও বটে। যেখানে কিছু শিক্ষক গবেষণা বরাদ্ধের জন্য দিনের পর দিন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে, টাকার অভাবে অনেকেই রিজেন্ট কিনতে পারছে না। আবার অনেকেই সরকারি গবেষণার বরাদ্ধ না পেয়েও প্যাশন থেকে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেইসব অধ্যাপকদের মুখের দিকে তাকালে এই একশো কোটি একক বরাদ্ধ খবরটি বড়ই পীড়াদায়ক, বড়ই অপমানজনক বটে।
আমি এমনো কিছু অধ্যাপকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি, যারা গত ১০/১২ বছর গবেষণার বরাদ্ধ না পেয়েও কেবল বিদেশি বন্ধু, কোলাবরেটরদের সাহায্যে ল্যাবকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের ভিতরই তাঁরা আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করছে। এসব মানুষদের কাজের মূল্যায়ন করার ক্ষমতা না থাকলে, জাতি হিসেবে আমরা অন্ধই থেকে যাবো। এই শতাব্দিতে এসেও গবেষণার বরাদ্ধ বাড়াতেই পারছি না। গবেষণায় কিছু হয় না, আইনপ্রেণেতাগণদের এমন কল্পনাপ্রসূত ধারণার কারণে উচ্চশিক্ষায় গবেষণায় এখনো বিমুখ আমরা। অথচ দেখেন, প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি প্রকল্পের বরাদ্ধ হচ্ছে, এইসব প্রকল্পে ডিজাইন, বিদেশি পরামর্শ, প্রকৌশলীদের ব্যয়ের জন্য শত শত কোটি টাকায় ব্যয় করা হচ্ছে দিনের পর দিন। যাদের বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে, কিংবা পরামর্শের জন্য কাড়ি কাড়ি ফি ঢালা হচ্ছে, তারা কি ভিনগ্রহের মানুষ? ভিনগ্রহে পড়াশোনা করেছে? না ওরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে, গবেষণা করেছে বিধায় তাদের জ্ঞান ও বিচেক্ষণতায় বিশ্বসেরা হচ্ছে। কারণ ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল পাঠ্যপুস্তক পড়াইনি, হাতে কলমে, যন্ত্রপাতিতে শিখেছে। বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়ে একাডেমিক সনদ নিয়েছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে সেইসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু দেখেন, আমাদের নিজ দেশের সন্তানদের মেধাকে কাজে না লাগিয়ে বছরের পর বছর ওইসব মেগা, ঠেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ‘বিদেশি’দের মোটা অঙ্কের সম্মানি দিচ্ছি। অথচ ওইসব টাকা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালোমানের ল্যাব তৈরি করলে, গবেষকদের বরাদ্ধ দিলে, দেশটা দুর্মর গতিতে এগিয়ে যেতো। আহা বাংলাদেশ! তুমি কি আর জাগবে না? ২-৪-২৪। ফেসবুক থেকে