৯ মাসে রপ্তানি আয় চার হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার পোশাকে আয় তিন হাজার ৭২০ কোটি ডলার
মো. আখতারুজ্জামান : [১] চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের ৯ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশের বেশি। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গত ৯ মাসে চার হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৬২৬ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ২৭১ কোটি টাকা কমেছে। তবে পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে।
[২] সেই হিসাবে গত. ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৫.৮৬ শতাংশ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল চার হাজার ১৭২ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
[৩] অন্যদিকে একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বর থেকে টানা তিন মাস ধরে পণ্য রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলারের বেশি হয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চ মাস।
[৪] গত মাসে ৫১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের মার্চের তুলনায় ৯.৮৮ শতাংশ বেশি। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। ৯ মাসে তিন হাজার ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমকি ৬২ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মার্চে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৩৪ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কিছুটা কম। তবে আগের বছরের মার্চের চেয়ে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানির এ চিত্র একক মাসের।
মার্চ মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি বৈশ্বিক বাজারের প্রেক্ষিতে খারাপ নয় মনে করছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বলেন, এই প্রবৃদ্ধি খুব একটা বেশি নয় আবার কমও নয়। বৈশ্বিক অর্থনীতি আসলে স্ট্রাগল করছে। কোভিডের সময় যে স্ট্রাগল শুরু হয়েছিল, সেটা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে সমস্যা তৈরি করেছিল, সেগুলো এখনও চলছেই।
তিনি বলেন, পুরো বিশ্ববাজার আসলে ভালো নেই। পাইকারি বা খুচরা বাজারে যেখানেই বলি, এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসেনি। খুবই অনিয়মিতভাবে উঠা-নামা করছে।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারীর পর রপ্তানি বাড়ার যে একটা সম্ভাবনা ছিল, সেটা আসলে আর স্থিতিশীল ছিল না। তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারই এখন ছোট হয়ে গেছে। এই ছোটর মধ্যেই আমরা ভালো করছি। এই অর্থে যে, ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এখনও ধরে রাখতে পেরেছি। এই যে প্রায় পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে, এটাই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি।
গতবছরের এই সময়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি সেটাতে হয়তো সেইভাবে হয়নি; এইভাবে তুলনা করেও লাভ নেই। দেখতে হবে গড় প্রবৃদ্ধিটা কী।
আমরা বলছি পণ্যের বহুমুখীকরণ, বাজারের বহুমুখীকরণ আমরা করতে পেরেছি; এটি একটি দিক। আরেকটি দিক হলো, সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এ কারণেও আমাদের রপ্তানি আয়ও বেড়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ এমন নয় যে, ইউনিট আকারে বেড়ে গেছে।
তথ্য বলছে, ৯ মাসে তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে মোট রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও অধিকাংশ অ-প্রধান পণ্য নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে; কমে গেছে আগের বছরের চেয়ে।
তথ্যে দেখা যায়, হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি হয়েছে ২৯ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলারের; আগের বছরের চেয়ে কমেছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারের; কমেছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ?৬৫ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার; আগের বছরের চেয়ে কমেছে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। আরেক সম্ভাবনাময় হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার; আগের বছরের চেয়ে কমেছে ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
গত বছরের চেয়ে রপ্তানি বাড়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম জুতা। জুতা রপ্তানি হয়েছে ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার; প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক ৬৭ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার; প্রবৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ; কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭১ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলারের।